সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গর্ভে সন্তান ধারণ, জন্মদান, প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ - সে তো এক স্বর্গীয় অনুভূতি! যুগে যুগে কালে কালে জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত তো এটিই। নারী হোক বা পুরুষ, নবজাতকের সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হিসেবে নবজন্ম লাভ করেন মা-বাবাও। সময় যত এগিয়েছে, সন্তান জন্মের পদ্ধতি তত আধুনিক আর প্রায় যন্ত্রণাহীন হয়েছে। সৌজন্যে অবশ্যই উন্নততর প্রযুক্তি। তবে সম্প্রতি মেক্সিকোর মহিলা যেভাবে মাতৃত্বের স্বাদ পেলেন, তা ম্যাজিক বললেও অত্যুক্তি হয় না! পদ্ধতি অতি চেনা - আইভিএফ। কিন্তু সেই কাজ চিকিৎসক, নার্স নয়। আইভিএফের গোটা পদ্ধতি হয়েছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে! বলা হচ্ছে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তো বটেই, প্রযুক্তির ইতিহাসেও এ এক বিপ্লব।
সম্প্রতি মেক্সিকোর গুয়াদালজারায় বছর চল্লিশের এক মহিলার কোল আলো করে এসেছে নবজাতক। আইভিএফ পদ্ধতিতে তার জন্ম হয়েছে। তবে নেপথ্যে পুরোপুরি কাজ করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। নিউ ইয়র্কের এক সংস্থা এতটাই উন্নত প্রযুক্তি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি। সংস্থার দাবি, মেক্সিকোর ওই মহিলার মা হওয়ার ঘটনায় সন্তান উৎপাদনের পদ্ধতিকে এক বিপ্লবে পরিণত করেছে। ভবিষ্যতে এই পথেই হাঁটতে আগ্রহী হবেন ভাবী মা-বাবারা।
AI রোবটের সাহায্যে আইভিএফ পদ্ধতি।
কিন্তু পদ্ধতি ঠিক কী? সাধারণ আইভিএফ পদ্ধতিতে ইনট্রাসাইটোপ্লাজম স্পার্ম ইঞ্জেকশন বা ICSI প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তাতে একটি শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। এই পদ্ধতি এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ। শুক্রাণু-ডিম্বাণুর নিষেক ঠিকমতো না হলে গোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও এই কাজ করলে অনিশ্চয়তা থেকে যায় 'হিউম্যান এরর' নিয়ে। আর সেই 'ভুল'টুকু কাটিয়ে ফেলতে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়েছে নিউ ইয়র্কের ওই সংস্থা। এই কাজের জন্য AI রোবটকে নিয়োগ করা হয়েছে। ICSI-র গোটা পদ্ধতি যাতে ঠিকমতো হয়, তার জন্য ২৩ টি ধাপে রোবটটিকে তৈরি করা হয়েছে। কাঁটায় কাঁটায় দক্ষতার সঙ্গে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করতে সক্ষম ওই রোবট। নিউ ইয়র্কের এই সংস্থায় AI রোবটের সাহায্য নিয়ে মোট ৫টি ভ্রূণ তৈরির চেষ্টা করেছিল। প্রথমটি ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় থেকে সফল। এর মধ্যে মেক্সিকোর মহিলা ইতিমধ্যেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বাকি ৩টি ভ্রূণ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে বলে দাবি ওই সংস্থার।
মাতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করা এক চিকিৎসকের মতে, আইভিএফ ও এআই-এর এই মেলবন্ধনে ঐতিহাসিক এক ঘটনা ঘটতে চলেছে। যারা কোনও না কোনও জটিলতার কারণে এখনও মা-বাবা হতে পারেননি, তাঁদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আইভিএফ পদ্ধতি। নিউ ইয়র্কের ওই সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার দাবি, তাঁরা যেভাবে এই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা পুরোপুরি সফল হলে আইভিএফের ঝক্কি এবং খরচ অনেক কমে যাবে। একটি ল্যাবে AI রোবটই অনেক শুক্রাণু-ডিম্বানুর মিলন ঘটাতে সক্ষম হবে এবং তা হবে অতি সূক্ষ্ণতা ও দ্রুততার সঙ্গে। সন্তানহীন হয়ে আর থাকতে হবে না কোনও দম্পতিকে।
