সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমেরিকার লেগে গেল ৯ মাস। কিন্তু চিনের মাত্র ৯ দিন! মহাকাশ অভিযানে গিয়ে মহাশূনে্য স্পেস স্টেশনে আটকে পড়া নভশ্চরদের মাত্র ৯ দিন পরই ঘরে ফিরিয়ে আনল চিন। একই ঘটনা ঘটেছিল নাসার দুই মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের ক্ষেত্রেও। ২০২৪ সালের ৫ জুন তঁারা আইএসএস-এ গিয়ে আটকে পড়েন। পৃথিবীতে তঁাদের ফেরাতে গিয়ে বার বার বাধার মুখে পড়ে নাসা। দেরির পর দেরি হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২৮৬ দিন পর (৯ মাস, মতান্তরে ১০ মাস) তঁারা পৃথিবীতে ফেরেন।
অথচ চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল শেংঝু-২০ মিশন মহাকাশযানে চড়ে মহাশূনে্য চিনের মহাকাশ গবেষণাগার, তিয়াংগং স্পেস স্টেশনে পৌঁছন ওয়াং জি, চেন ঝংগ্রুই এবং কম্যান্ডার চেন ডেং। ছ’মাস তঁাদের সেখানে থাকার কথা ছিল। তারপর ফিরে আসতে হত পৃথিবীতে। কিন্তু মহাশূনে্য ভাসমান মাইক্রোমিটিওরয়েড-এর ধ্বংসাবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তঁাদের মহাকাশযান। ফলে যাত্রা পিছিয়ে যায়। ৯ দিন মহাকাশ গবেষণাগারেই থাকতে গয় ওই তিন নভশ্চরকে। এরই মধে্য ৩১ অক্টোবর শেংঝু-২১ মহাকাশযানে চড়ে আরও তিন নভশ্চর সেখানে যান। চিনা প্রযুক্তির সাহাযে্য এর পর পরিত্যক্ত শেংঝু-২০ কে যুক্ত করা হয় শেংঝু-২১ এর সঙ্গে। আর তাতে চড়িয়েই মহাশূনে্য আটকে পড়া তিন মহাকাশচারীকে নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে আনে চিন। কিছু দিন পর মহাশূন্যে পাঠানো হয় শেংঝু-২২ কে। সেই মহাকাশযানটি দ্বিতীয় দফায় পৌঁছনো মহাকাশচারীদের ঘরে ফিরিয়ে আনে।
এই ঘটনা থেকেই প্রশ্ন উঠছে, কোন কেরামতিতে চিনের এই বাজিমাত? কীভাবে তারা আমেরিকাকে, বলা ভালো, নাসাকে পিছনে ফেলে দিল। ওয়াকিবহাল মহলের এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। কারও মতে, চিনের মহাকাশ গবেষণাগার যা মহাশূনে্য রয়েছে, আকারে বেশ ছোট। নাসারটির তুলনায় এক পঞ্চমাংশ জায়গা নিয়ে রয়েছে। ফলে সেখানে একসঙ্গে বেশি জনের থাকা খুব কষ্টকর। কাজেই চিনকে অতিসত্বর কিছু করতেই হত। দ্বিতীয়ত, বিশেষজ্ঞরা বলেন চিনের মহাকাশ গবেষণা প্রযুক্তি অনেকটাই উন্নত এবং নাসার তুলনায় দ্রুত। চিন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, যা তাদের এই বিষয়ে এগিয়ে রেখেছে। আর তৃতীয়ত, আমেরিকা এই মহাকাশ অভিযান নিয়ে বিগত দিনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য পার্টনারদের উপর নির্ভর করেছে, বাণিজি্যক দিক দিয়ে। কিন্তু চিন এই বিষয়ে কোনওদিন অন্য কোনও দেশের প্রযুক্তি বা পার্টনারের উপর নির্ভর করে না। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়, ফলে কাজ দ্রুত হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছর ৫ জুন সুনীতাদের নিয়ে নাসার আইএসএস অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। আট দিনের সফরে গিয়েছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সেই ত্রুটি বারংবার মেরামত করার চেষ্টা করা হলেও সাফল্য আসেনি। ফলে ক্রমশ পিছোতে থাকে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফিরে আসাও। মাত্র আট দিনের সফরে আইএসএস-এ গিয়েছিলেন তঁারা। কিন্তু তা বাড়তে বাড়তে প্রায় দশ মাসে গিয়ে ঠেকে। শেষ পর্যন্ত ১৯ মার্চ, মঙ্গলবার সুনীতা, বুচ এবং ক্রু-নাইন-এর আরও দুই মহাকাশচারী পৃথিবীতে ফিরে আসেন।
