সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীপাবলির সময় থেকেই দিল্লির দূষণ মাত্রাছাড়া পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে। যার নেপথ্যে এক অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে শস্যের গোড়া পোড়ানো। এবার তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল নাসা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, বিগত বছরগুলিতে দিনের যে সময়ে শস্যের গোড়া পোড়ানো হত সেই সময় বদলেছে কৃষকরা। আর তাতেই মারাত্মক প্রভাব পড়েছে পরিবেশের উপরে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরেই অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে উত্তর ভারতে শস্যের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়া এক পরিচিত ছবি। নতুন ফসল ঘরে তোলার পর শস্যের গোড়া পুড়িয়ে দেওয়ার এই প্রথাই প্রভাব ফেলছে বাতাসে। ২০২৫ সালে এসে দেখা যাচ্ছে, সেই ধারাই বজায় রয়েছে। তবে পোড়ানোর সময়ে বদল এসেছে। আগে যেখানে দুপুর একটা থেকে দুটোর মধ্যে তা পোড়ানো হত, এখন সেই সময় বদলে হয়েছে বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা। GEO-KOMPSAT-2A নামের দক্ষিণ কোরিয়ার এক কৃত্রিম উপগ্রহ ওই সব এলাকার প্রতি দশ মিনিটের ছবি তুলেছে রোজ। পাশাপাশি অগ্নি-নজরদারি ব্যবস্থাপনায় দিনে দু'বার করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তবে যেহেতু সেটা মাত্র দু'বার, তাই অনেক কিছুই তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর, নাসার অ্যাকোয়া উপগ্রহ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া ও কুয়াশার এক ঘন স্তরের ছবি তুলেছে। পরে সেই তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের তুলনায় এবার শস্য পোড়ানোর ঘটনা বেশি ঘটলেও ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের তুলনায় তা কম।
কিন্তু শস্য পোড়ানোর সঙ্গে দিল্লির দূষণের সম্পর্ক কতটা গভীর তা নিয়ে আলোচনা এখনও অব্যাহত। মনে করা হচ্ছে যখন দূষণ বেশি, তখন তা ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ দায়ী। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে গেলে তা কমে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। বছরের গড় হিসেবে সেটা ১০ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শস্য পোড়ানোর সময় দূষণের মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে। সারা রাত ধরে দূষণ বাড়তে থাকে। কেননা সন্ধের পর থেকে সাধারণ ভাবে বাতাসের গতি কম থাকে। ফলে দূষিত কণাগুলি অনেক দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে শস্যের গোড়া পোড়ানো নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। রাজধানীর সাম্প্রতিক ধোঁয়াশার পর এই বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন দিল্লির পরিবেশ মন্ত্রী গোপাল রাইও। শীর্ষ আদালত পাঞ্জাব সরকারকে জানায়, “শস্যের গোড়া পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। কীভাবে করবেন জানি না। এটা আপনাদের দায়িত্ব। কিন্তু এটা অবিলম্ব বন্ধ হওয়া উচিত। অবিলম্বে পদক্ষেপ প্রয়োজন।” এছাড়াও কেন্দ্রকে চার রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকেরও পরামর্শ দেয় শীর্ষ আদালত।
প্রসঙ্গত, দীপাবলির পর থেকেই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে দিল্লির বাতাস। পরিত্রাণ পেতে ‘ক্লাউড সিডিং’-এর ব্যবস্থা করেছিল দিল্লি সরকার। সম্প্রতি তার ট্রায়ালও হয়। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে না-হওয়ার-মতো। অথচ ইতিমধ্যেই তিনটি ব্যর্থ ট্রায়াল বাবদ প্রায় ১.০৭ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি। বরং লাফিয়ে বেড়েছে দূষণ। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ও বিজেপি নেত্রী কিরণ বেদি কয়েকদিন আগেই দাবি করেন, রাজধানীর বর্তমান পরিস্থিতি কোভিডের সঙ্গে তুলনীয়!
