রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: এ যেন ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে আসা মৃত্যুর মুখ থেকে। বাংলার বৃহৎ অরণ্যাঞ্চল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানকে নয়া রূপে দেখা গেল। বৃহস্পতিবার চারটি ড্রোন ওড়ানো হয় জঙ্গলের উপর দিয়ে। তাতেই ধরা পড়েছে, সবুজের সঞ্চার হয়েছে আলিপুরদুয়ারের এই জাতীয় উদ্যানে। সেই ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। তা দেখে অত্যন্ত খুশি পরিবেশপ্রেমীরা। গত অক্টোবরের গোড়ায় প্রকৃতি খুব দ্রুত নিজের ক্ষত মেরামত করেছে নিজেই, এমনই বলছেন তাঁরা।
গত ৫ অক্টোবর বন্যায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ঢাকা পড়েছিল ডলোমাইট মিশ্রিত পলিতে। সবুজের জায়গা দখল করেছিল ছাই রং। সেই রূপে আবার পরিবর্তন এসেছে। ধূসর সেই বিস্তীর্ণ এলাকায় আবার সবুজের সঞ্চার, যা দেখে কার্যত মুখে হাসি ও বুকে বল আসতে শুরু করেছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষের। বৃহস্পতিবার চারটি ড্রোনের সাহায্যে বনাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালানো হয়। তাতে বেশ কিছু ছবি ধরা পড়েছে। সেই সব ছবিতেই সবুজ প্রাণের সঞ্চার হওয়ার ছবি ড্রোন ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে। যা দেখে কার্যত উৎফুল্ল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
পলি মিশ্রিত ডলোমাইটে উধাও হয়ে গিয়েছিল সবুজ। নিজস্ব ছবি।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মূলত জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চারটি রেঞ্জে ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালানো হয়েছে। এই চারটি রেঞ্জেই গণ্ডারের বিচরণভূমি। এর মধ্যে বিস্তীর্ণ তোর্সা নদীর চর এলাকাও রয়েছে। এই সব রেঞ্জে গণ্ডারের বিচরণ রয়েছে বলে এই রেঞ্জগুলোকে রাইনো রেঞ্জ বলা হয়। ড্রোনের সাহায্যে নজরদারির নানা সুফল রয়েছে। যেখানে হেঁটে বা হাতির পিঠে পৌঁছনো সম্ভব হয় না, সেসব এলাকায় সহজেই ড্রোনে নজরদারি চালানো যায়। এতে সময় ও খরচ দুই কম হয়। ড্রোনের সুবিধের কারণে এই জাতীয় উদ্যানে আরও নতুন ড্রোন কেনার ভাবনা রয়েছে বনদপ্তরের।
নতুন করে সবুজের সঞ্চার জলদাপাড়ায়। নিজস্ব ছবি।
উল্লেখ্য, ২১৬ বর্গ কিলোমিটার জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। এই বনাঞ্চলে বর্তমানে ৩৩১ টি গণ্ডার রয়েছে। গণ্ডারের সংখ্যার নিরিখে গোটা দেশে অসমের কাজিরাঙার পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আলিপুরদুয়ারের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান। কিন্তু ৫ অক্টোবর বন্যায় এই বনাঞ্চলের বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে পলি পড়ে যায়। এর ফলে মহা বিপদে পড়ে জলদাপাড়ার গর্ব একশৃঙ্গ গণ্ডারকুল। কিন্তু 'অপারেশন রাইনো'তে সেই সব গণ্ডারকে বিপদমুক্ত করছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
জলদাপাড়ার বিখ্যাত একশৃঙ্গ গণ্ডার। নিজস্ব ছবি।
