সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘনঘন কম্পনের কবলে ভারতের নানা স্থান, বিশেষত পার্বত্য এলাকা। গত সপ্তাহে খুব কম সময়ের ব্যবধানে কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ। প্রথম কম্পনের প্রভাব পড়েছিল বঙ্গেও। কম্পন অনুভূত হয় কলকাতাতেও। টেকটনিক পাতের সংঘর্ষে মুহুর্মুহুই ঘটেছে এই ঘটনা। এসবের জেরে এবার কম্পনপ্রবণ এলাকা নিয়ে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করল ভারত। ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের প্রকাশিত সেই মানচিত্রে চরম উদ্বেগের ছায়া। বলা হচ্ছে, গোটা হিমালয়ই কম্পনের আওতায়। যে কোনও মুহূর্তে ভূমিকম্প গ্রাস করে ফেলতে পারে হিমালয়ের পাদদেশকে! এই প্রথমবার হিমালয় অঞ্চলকে ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে 'অতি বিপজ্জনক' বলে চিহ্নিত করা হল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়া হিমালয় পর্বতশ্রেণি।
কিন্তু কেন হিমালয়ের পার্বত্য অংশ এতটা ঝুঁকিপ্রবণ? তা বুঝতে হলে একেবারে প্রাথমিক ভূগোলের দ্বারস্থ হতে হবে। 'প্লেট টেকটনিক থিওরি' অর্থাৎ ভূগর্ভের নিচে প্লেট বা পাতের সংঘর্ষের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের জন্মবৃত্তান্ত মনে করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। যুগ যুগ আগে প্রকৃতির এই চলনেই তৈরি হয়েছিল বিশালাকার হিমালয় পর্বত, যা এখনও 'নবীন ভঙ্গিল পর্বতে'র শ্রেণিতে পড়ে। ভূবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হিমালয়ের নিচে থাকা ভারতীয় পাতকে সমানে ধাক্কা দিয়ে চলেছে ইউরেশীয় পাত। যার জেরে প্রতি বছর তার সরণ হচ্ছে ৫ সেন্টিমিটার করে। এই পরিসংখ্যান পাতের চলন হিসেবে বেশ অনেকটাই। একটি পাতের উপর আরেকটি পাতের বলপ্রয়োগ বললেও অত্যুক্তি হয় না। আর এতে ক্রমশ দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বেড়ে চলেছে হিমালয়। তার পাদদেশে দেখা দিচ্ছে একাধিক ফাটল। চাপ সামলাতে সামলাতে মাটির উপরিতল কখনও কখনও কুঁকড়ে যাচ্ছে, কখনও চাপমুক্তির জন্য নিজেকে প্রশস্ত করছে। তখনই কম্পন টের পাওয়া যাচ্ছে। সেইসঙ্গে ভঙ্গিল পর্বতও স্থায়িত্ব হারাচ্ছে।
হিমালয় এলাকা জুড়ে পাতের চলন, সংঘর্ষ-সহ একগুচ্ছ প্রাকৃতিক ঘটনা যোগ করলে যা দাঁড়াচ্ছে, তা হল কম্পনজনিত বিশাল ঝুঁকি। ভূমিকম্পের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, হিমালয়ের অগ্রভাগ, মধ্যভাগ ও পরিধি বরাবর এই ফাটল বেশি। অর্থাৎ গোটা এলাকাজুড়েই কম্পনের ব্যাপক আশঙ্কা। যার তীব্রতা অনেক বেশি হতে পারে। হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশজুড়ে প্রায় ৬১ শতাংশ অঞ্চলই কম্পন প্রবণ! এই বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় কী? এই উত্তর হয়ত পরিবেশবিজ্ঞানীদেরই জানা।
