নিরুফা খাতুন: রেড পান্ডার পর এবার বিলুপ্তপ্রায় হিমালয়ান নেকড়েকুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ দার্জিলিং চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। জিনগত কারণে একই পরিবারের সদস্য পুরুষ ও স্ত্রী প্রাণীর ঔরসে সন্তান প্রজনন সমস্যাবহুল বলে মত প্রাণীবিজ্ঞানীদের। কয়েক বছর আগে যে সমস্যায় বংশবৃদ্ধি থমকে গিয়েছিল দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান চিড়িয়াখানায়। শেষ পর্যন্ত গত বছর নেদারল্যান্ডস থেকে এক জোড়া রেড পান্ডা এনে সেই সমস্যা মেটানো হয়।
রেড পান্ডা।
এবার এখানে একই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে আরেক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিমালয়ান নেকড়ে নিয়ে। দার্জিলিং চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, একই পরিবারের সদস্য হওয়ায় এখানকার হিমালয়ান নেকড়ে পরিবারে দীর্ঘ সাত বছর নতুন কোনও সদস্যের জন্ম হয়নি। দেশের অন্য কোনও চিড়িয়াখানা থেকে সঙ্গী বা সঙ্গিনী নিয়ে আসার চেষ্টা করেও সেখানে সন্ধান না মেলায় চেষ্টা বিফল হয়েছে। ফলে হিমালয়ান নেকড়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন প্রবল চিন্তায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
দেশের আঙুলে গোনা যে কয়েকটি চিড়িয়াখানায় হিমালয়ান নেকড়ে আছে, তার মধ্যে অন্যতম দার্জিলিং পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান চিড়িয়াখানা। শীতপ্রধান অঞ্চলে বসবাসকারী 'বিপন্ন' তালিকাভুক্ত এই বন্যপ্রাণ প্রজাতির সংরক্ষণের কাজ চলছে এখানে। চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, এখানে থাকা মাত্র চারটি হিমালয়ান নেকড়ের মধ্যে গত সাত বছর ধরে আর প্রজনন হচ্ছে না। ফলে থমকে গিয়েছে সংরক্ষণ প্রকল্প।
দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় হিমালয়ান নেকড়ে। নিজস্ব ছবি।
১৯৯০ সালে সিমলা চিড়িয়াখানা থেকে দার্জিলিংয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল এক জোড়া হিমলয়ান নেকড়ে। তাদের নাম ছিল হীরা এবং মোতি। তাদের পরিবার এখানে বেড়ে উঠেছিল ভালোভাবেই। এখানে জন্ম নেওয়া বেশ কিছু নেকড়েকে পাঠানো হয়েছিল দেশের অন্য চিড়িয়াখানাতেও। কিন্তু প্রজনন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সদস্য সংখ্যা আপাতত ঠেকেছে চারে, একজোড়া পুরুষ ও একজোড়া স্ত্রী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছর। অন্য তিনজন ৭ বছরের। সাধারণত ৩ বছর বয়সে পৌঁছলে নেকড়েরা প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে আর কোনও নতুন অতিথি হিমালয়ান নেকড়ে পরিবারে আসেনি। প্রজননের অনেক চেষ্টা চলেছে। সুখবর আসেনি। সিমলা, সিকিম, বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। কোথাও সন্ধান মেলেনি ওই নেকড়ের। যে কারণে হিমালয়ান এই নেকড়ের সংরক্ষণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার এক আধিকারিক।
তিনি জানান, রেড পান্ডাদের জিনগত সমস্যা এড়াতে নেদারল্যান্ডস থেকে একজোড়া রেড পান্ডা এনে সুফল পাওয়া গিয়েছিল। এখানে যে নেকড়ে এখন বর্তমান, তাদেরও প্রজনন একই পরিবারের মধ্যে হয়েছে। ফলে জিনগত সমস্যা এদের মধ্যে রয়েছে। একমাত্র বাইরে থেকে হিমালয়ান নেকড়ে নিয়ে এলে সেই সমস্যা মেটানো সম্ভব।
