রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা! আচমকা হড়পা বানে বন্যা পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গে। ভেসে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি, রাস্তা, সেতু। বিপর্যয়ের চিহ্ন ছড়ানো চারপাশে। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে পুনর্গঠন করা হবে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। এদিকে ক্ষতির খতিয়ান আরও বাড়িয়ে তুলেছে ডলোমাইটের দূষণ। ভুটান পাহাড় থেকে নামা বৃষ্টির জলে ধুয়ে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন নদীর পাড়ে ডলোমাইটের পলিস্তর পড়ে গিয়েছে। তাতে ব্যাপক দূষণ ছড়িয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের।
ভুটান পাহাড় খনন করে প্রচুর ডলোমাইট পাওয়া যায়। সেখানে পাহাড় কেটে উত্তোলন করা ডলোমাইট সিমেন্ট তৈরির কাজে লাগে। ভারত অনেকাংশে ভুটানের এই ডলোমাইটের উপর নির্ভরশীল। খননকাজের পর গুঁড়ো ডলোমাইট মিশে থাকে পাহাড়ের গা কিংবা পাদদেশে। এরপর যখন বৃষ্টির জল পাহাড় বেয়ে সমতলে নেমে আসে, তার সঙ্গে মিশে যায় ওই ডলোমাইট। তার সংস্পর্শে এলে চর্মরোগ, ফুসফুসের রোগের আশঙ্কা বাড়ে। ভুটান থেকে ডলোমাইটের বস্তা আলিপুরদুয়ারের সীমান্ত লাগোয়া জয়গাঁয় নামানো হওয়া নিয়ে মাস খানেক আগেই এলাকাবাসী আপত্তি তুলেছিলেন। কারণ, ওই বস্তা থেকেও দূষণ ছড়াচ্ছে, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মানুষজন।
ডলোমাইট দূষণে চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত।
এবার ভুটান থেকে আসা বৃষ্টির জলে অনেকাংশে প্লাবিত ডুয়ার্স এলাকা। আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের শালকুমার গ্রামে শিসামারা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়ে। তার মাধ্যমে ডলোমাইট মিশ্রিত পলিস্তর জমছে সমতলে। তাতে সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজমির। বিঘার পর বিঘা জমির চা, ধান-সহ নানা ফসল নষ্ট হয়েছে। জলস্তর একটু নেমে গেলেই স্পষ্ট হচ্ছে ডলোমাইটের পলি। চিন্তা এখন একটাই, কীভাবে ওই বিষের প্রকোপ থেকে জমি রক্ষা করা যাবে?
ভুটান পাহাড় থেকে ডলোমাইট মিশ্রিত বৃষ্টির জল এসে মিশেছে ডুয়ার্সের জমিতে। নিজস্ব ছবি।
এনিয়ে স্থানীয় কৃষক বিমল বর্মনের আক্ষেপ, ''যা চাষ করেছিলাম, সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বৃষ্টির জলে। কোনও ফসল বাঁচাতে পারিনি। কীভাবে কী করব, জানি না। সরকার যদি কোনও পরামর্শ দেয় অথবা কিছু করে, তাহলে ভালো হয়। সেই অপেক্ষায় আছি আমরা।'' আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ''অনেক জমি, বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। দূষণও ছড়িয়েছে। আমরা সব খতিয়ে দেখছি। একে একে সব কিছুর সমাধান হবে।''
