সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এ পৃথিবী সকলের জন্য। মানুষ হোক কি মানবেতর প্রাণী, উদ্ভিদ - সকলের বাসযোগ্য। কিন্তু উন্নততম প্রাণী হিসেবে মানুষই তার সিংহভাগ দখল করে রেখেছে। আর তার ক্রমবর্ধমান লোভের শিকার অন্যান্য প্রাণী। না, এসব তত্ত্বকথা নয়। সম্প্রতি প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থার সর্বোচ্চ শাখার এক রিপোর্টে এমনই উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাতে উল্লেখ, মহাবিশ্বের ৪৮ হাজারের বেশি প্রাণী দ্রুত বিলুপ্তির পথে। এক লক্ষ ৭২ হাজার প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত। তার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মানুষের বাসস্থান, কৃষিজমি বৃদ্ধির মতো কারণ। আসলে পৃথিবীর ১ ভাগ স্থল তো বটেই, তিনভাগ জলেও থাবা বসাচ্ছি আমরা! তাই বাকিরা আজ বিপন্ন।
সম্প্রতি আবু ধাবিতে ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের সম্মেলন ছিল। সেখানে বিলুপ্তপ্রায়, বিপন্ন প্রাণীদের নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মেরুপ্রদেশের বাসিন্দা যেমন হার্প সিল, মেরুভাল্লুক, সি টার্টল এবং বহু পাখি দ্রুতই বিলুপ্তির পথে এগোচ্ছে। তার অন্যতম কারণ অবশ্যই বিশ্ব উষ্ণায়ন। যার জেরে দুই মেরুর জমাট বরফ ধীরে ধীরে গলছে। হিমবাহের গলনে বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। শুধু তাই নয়, সমুদ্রের তলদেশেও উষ্ণতাবৃদ্ধির জেরে উথালপাথাল অবস্থা। আর এভাবেই সেসব জায়গার আদি বাসিন্দাদের বাসস্থান শেষ হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও যারা 'বিপন্ন প্রাণী'র তালিকায়, রাতারাতি তারাই হয়ে উঠেছে বিলুপ্তপ্রায়!
সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল গ্রেথেল অ্যাগুইলার ওই রিপোর্ট নিয়ে জানিয়েছেন, ''বিশ্বজুড়ে এই পরিবর্তনের নেপথ্যে মানুষের নানা কার্যকলাপের প্রভাবই বেশি। প্রকৃতির উপর অত্যাচার এবং আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার একটা ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।''
রিপোর্ট অনুযায়ী, দ্রুত বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সংখ্যাটা ৪৮ হাজার ৬৪৬। আর লাল তালিকাভুক্ত অর্থাৎ বিপন্ন ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৬২০। ভাবতে পারছেন একবার? আচমকাই কোনও একটা দিন হয়ত আসবে, মেরু ভাল্লুক, হার্প সিলদের অস্তিত্ব থাকবে শুধু ছবিতেই! পাখিদেরও একই অবস্থা। ডানা মেলে আকাশে ওড়ার জায়গা এবং বাসস্থান ক্রমশই কমছে। কনজারভেশন অফ নেচারের রিপোর্ট বলছে, অন্তত ৬১ শতাংশ পাখির জন্মহার কমেছে। বিশ্বের ১১ হাজার ১৮৫টি প্রজাতির পাখি ঝুঁকির মুখে। এদের বেশিরভাগই আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকার। এহেন রিপোর্ট দেখেও যদি মানবজাতির মাথা লজ্জায় হেঁট না হয়, তাহলে তার 'মান' আর 'হুঁশ' - দুটি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
