রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: দূষণ (Pollution) লেগেছে নদীর জলে। আর তাতে বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের মড়ক শুরু হয়েছে। নদিয়ার তেহট্ট (Tehatta) এলাকায় জলঙ্গি নদীর জলদূষণ নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় বাসিন্দারা। কয়েক সপ্তাহ আগেও জলঙ্গি নদীতে হাতে গোনা কিছু মাছের মৃতদেহ ভাসতে দেখা গিয়েছিল। এখন সংখ্যাটা হাজার হাজার। যা নিয়ে চিন্তিত গোটা তেহট্টবাসী থেকে নদী বাঁচাও কমিটির সদস্যরা।
একদিকে মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে খালের জল প্রবেশ করে জলঙ্গির (Jalangi) জল কৃষ্ণবর্ণ আকার ধারণ করেছে। অন্যদিকে, বৃষ্টির অভাবে নদীর জলে পাট জাঁক দেওয়ায় জলের রং আরও বদলাচ্ছে। সবমিলিয়ে ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে নদীর জল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীর প্রবাহ পথে কিছু কিছু জায়গা যেমন তারানগর, নিশ্চিন্তপুর, রঘুনাথপুর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর এলাকায় নর্দমার জলের মতো কালো হয়েছে এই জলঙ্গি নদীর জল। যেখানে কিছুদিন আগে পর্যন্ত এই নোংরা জলের জন্য নদীর মাছ (fishes) ভেসে উঠেছিল। ৮ থেকে ৮০ – সব বয়সি মানুষকে মাছ ধরতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন নদীর একপাশে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মৃত মাছ। তাতে দুর্গন্ধের পাশাপাশি দূষণও বাড়ছে।
এলাকাবাসী সঞ্জীব হালদার, দীপঙ্কর হালদারদের বক্তব্য, সপ্তাহখানেক আগে বাজারে ছেয়ে গিয়েছিল নদীর মাছ। সেই মাছ কিনতে হুড়মুড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখন তাঁরা কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছেন। মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, নদী থেকে যে সমস্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মধ্যে পুঁটি, কালবোশ, ট্যাংরা, বান মাছের সংখ্যাটা বেশি। কিন্তু পচা জলের কারণে স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। এই দূষিত জলের মৃত মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: আগামী দু’দিন দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাল্লা দিয়ে বাড়বে তাপমাত্রাও]
মৎস্যজীবীদের দাবি, পাট (Jute) পচাতে নদীতে জাঁক দেওয়া হচ্ছে, সেই পাট দ্রুত পচাতে কোন বিশেষ রাসায়নিক পাউডার ব্যবহার করছেন চাষিরা। এতে করে নদী দূষণের পাশাপাশি মরছে মাছ। এ বিষয়ে তেহট্ট ১ সহ কৃষি আধিকারিক আনন্দ কুমার মিত্র বলেন, ”চাষিদের পাট দ্রুত পচাতে ফাংগাল কালচার ব্যবহার করতে বলা হয়। আর তা স্রোতহীন জলাশয়ে প্রযোজ্য। তবে নদীতে তা প্রয়োগ করে থাকলে দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে পাট পচে গেলে সেক্ষেত্রে নদীর জল দূষিত হতে পারে।”
[আরও পড়ুন: লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে খুনের পর দেহ পুঁতেও রক্ষা মিলল না, আসানসোলে হত্যাকাণ্ডে ধৃত ৩]
তবে পরিবেশ কর্মীরা জানিয়েছেন, এরপরেও সঠিক ব্যবস্থা নিতে না পারলে ধীরে ধীরে নদী যে পরিমাণে দূষিত হবে, তাতে নদীর নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র (Ecosystem) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি বলেন, সমস্ত প্রশাসনিক বিভাগীয় রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য আবেদন পাঠানো হবে। বাকি বিষয় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।