সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনা অনেক শোনা যায়। সে শুধু প্রাণিজগতেই ঘটে থাকে, তেমনটা নয়। মহাশূন্যেও এমন অঘটন ঘটে গিয়েছে! ইতিহাসের নয়া অধ্যায় অন্তত সেটাই বলছে। সম্প্রতি জার্মানি ও আমেরিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটা দল গবেষণার নিরিখে এই তথ্য পেয়েছেন। পৃথিবী ও চাঁদের একাধিক পাথর থেকে পাওয়া আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানাচ্ছেন, বহু প্রাচীন সময়, যখন পৃথিবীর একেবারে প্রাথমিক দশা, তখন 'থিয়া' নামে কাল্পনিক গ্রহের সঙ্গে বিরাট সংঘর্ষ ঘটে। তাতেই চাঁদের জন্ম হয়। আর সেই সংঘর্ষের অব্যাবহিত পরেই ধ্বংস হয়ে যায় থিয়া!
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌরবিজ্ঞানীরা এনিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। পৃথিবী থেকে সংগৃহীত অন্তত ১৫টি পাথরের টুকরো, চাঁদের ৬ শিলাখণ্ড ও বিভিন্ন ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া আইসোটোপ নিয়ে গবেষণা চলে। তাতেই চাঁদের জন্মরহস্যের বিষয়টি উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। বলা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বথর আগে মঙ্গলের মতো এক কাল্পনিক গ্রহ 'থিয়া'র সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মহাশূন্যে সেসময় সদ্য 'বিগ ব্যাং' বা মহাবিস্ফোরণে জন্ম নিয়েছে পৃথিবী। তখন তার শৈশব দশা - প্রোটো-আর্থ বলা হয়েছে তাকে। থিয়ার সঙ্গে এই প্রোটো-আর্থের সংঘর্ষের জেরে ছোট্ট চাঁদ অর্থাৎ আমাদের উপগ্রহ জন্ম নেয়। আর তারপর নিজের শক্তি, তাপের জেরে নিজেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়! এ অনেকটা গল্পের মতো।
কিন্তু কে এই 'থিয়া'? এত রহস্য কেন তাকে ঘিরে? মহাকাশ বিজ্ঞানে তার পরিচয়ই বা কী? 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সৌরজগতের এক সদস্য ছিল থিয়া। সূর্য, পৃথিবীর জন্মের কাছাকাছিই তারও আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। 'সেলিস্টিয়াল বডি' বা মহাজাগতিক বস্তুটির একেক অংশে অদ্ভূতভাবে একেক সংখ্যক নিউট্রন পাওয়া গিয়েছে। তার ভরও ভিন্ন। ক্যালসিয়াম, জারকোনিয়াম, ক্রোমিয়াম, টাইটানিয়ামের মতো একাধিক আইসোটোপও রয়েছে। আর এতরকম বৈচিত্র্যের কারণে থিয়াকে কোনও একটি সংজ্ঞায় বেঁধে ফেলা যায়নি। কোথা থেকে তার উৎপত্তি, তাও জানা যায়নি।
গবেষক টিম হোপের কথায়, ''সৌরজগত যে ধরনের ধূমকেতু বা গ্রহাণুর খণ্ড দিয়ে তৈরি হয়েছে, তার কোনওটার সঙ্গে থিয়ার মিল নেই। আমাদের পরিচিত কোনও নমুনার সঙ্গেই মেলে না তার বৈশিষ্ট্য। এখনও পর্যন্ত অজানা কোনও বস্তু দ্বারা থিয়া গড়ে উঠেছিল বলেই মনে করছি আমরা। অথবা এমনটাও হতে পারে, একসময়ে সৌরজগতে থাকা ওই বস্তু পরে অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাই তার সম্পর্কে আর জানা যাচ্ছে না।''
