shono
Advertisement

Breaking News

যৌনতাই কাল! আধুনিক মানুষের সঙ্গে সঙ্গমই নিয়ান্ডারথালদের অবলুপ্তির কারণ?

আর কী কী থিওরি রয়েছে?
Posted: 07:39 PM Oct 07, 2023Updated: 07:41 PM Oct 07, 2023

বিশ্বদীপ দে: মানুষ। এই পৃথিবীতে যারা এসেছে সবার শেষে। কালক্রমে স্রেফ মগজের ধূসর কোষের সাহায্যে নীল রঙের গ্রহের শ্রেষ্ঠ জীব হয়ে ওঠা। কিন্তু এই ‘জার্নি’ কি খুব সহজ ছিল? আজকের মানুষ একবারে আসেনি। আদিম মানবের বিভিন্ন প্রজাতি পেরিয়ে তবে আজকের হোমো স্যাপিয়েন্সদের আগমন। আর এই যাত্রাপথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ান্ডারথাল মানুষরা। কিন্তু কেন তারা আচমকাই হারিয়ে গিয়েছিল? এনিয়ে আজও গবেষণার শেষ নেই। উঠে আসছে নানা আশ্চর্য সব তথ্য।

Advertisement

নিয়ান্ডারথাল মানুষদের (Neanderthal) ইউরোপে প্রথম দেখা গিয়েছিল মোটামুটি ৪ লক্ষ বছর আগে। বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী থিওরি অনুযায়ী, ৪০ হাজার বছর আগে তারা অবলুপ্ত হয়ে যায়। ঠিক সেই সময়ই আফ্রিকা থেকে এই মহাদেশে প্রবেশ করেছিল হোমো স্যাপিয়েন্সরা (Homo sapiens)। এ কি নেহাতই সমাপতন? নাকি আমরাই এই ‘ইঁদুরদৌড়’ থেকে ছিটকে দিয়েছি নিয়ান্ডারথালদের? কিছু গবেষকদের এমনই দাবি।

[আরও পড়ুন: মহাকাশে অব্যাহত ভারতের দাপট! রাশিয়া, চিনের পর স্পেস স্টেশন তৈরির ঘোষণা ইসরোর]

তবে এই নিয়ে ‘শেষ কথা’ যে বলা যায়নি তা শুরুতেই পরিষ্কার করে দেওয়া ভালো। আমাদের হাতে রয়েছে নানা ধরনের দাবি। যার মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত দাবিটি হল যৌনতার! হ্যাঁ, মারামারি নয়, হোমো স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে যৌনতা করাই কাল হয়েছিল তাদের। অবলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেটাই! এমনই দাবি গবেষক প্রফেসর ক্রিস স্ট্রিঙ্গার ও ডক্টর লুসিল ক্রেটের।

ঠিক কী দাবি করছেন তাঁরা? এবিষয়ে বলতে গিয়ে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ক্রিস এক সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছেন, ”গত কয়েক বছরে পরিষ্কার হয়েছে হোমো স্যাপিয়েন্স ও নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্ক বেশ জটিল। আমাদের ধারণা, নিয়মিত এই দুই প্রজাতির মধ্যে হওয়া যৌনতাই নিয়ান্ডারথালদের শেষ করে দিয়েছিল।” তবে সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, এখনও এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে জোরালো কিছু খাড়া করা যাচ্ছে না। কিন্তু পর্যবেক্ষণের ফলাফল সেদিকেই যেন ইঙ্গিত করছে।

[আরও পড়ুন: রয়েছে নিজস্ব পাঁচালি, বিশেষ রীতিতে গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপুজো পড়ল ৩৪০ বছরে]

বছরখানেক আগে ‘প্যালেঅ্যানথ্রোপলজি’ নামের এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল এই সংক্রান্ত এক গবেষণাপত্র। যেখানে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র পুরুষ নিয়ান্ডারথাল ও নারী হোমো স্যাপিয়েন্সদের মধ্যেই সফল যৌনতা সম্ভব হয়েছিল। কেন এমন মনে করা হচ্ছে? আসলে আধুনিক মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্সদের মধ্যে নিয়ান্ডারথাল থেকে মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ পাওয়া যায় না। আর এই ডিএনএ আসে মায়ের থেকেই। এই দাবি যদি সত্যি হয়, তার অর্থ দাঁড়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষ নিয়ান্ডারথালরা অন্য প্রজাতির সঙ্গে মিলনকেই বেছে নিয়েছিল, নিজের প্রজাতির সঙ্গে সঙ্গমের পরিবর্তে। এবার এই মিলন স্বেচ্ছায় প্রেমঘন পরিবেশে হয়েছিল, নাকি নিয়ান্ডারথালরা বলপূর্বক স্ত্রী হোমো স্যাপিয়েন্সদের সঙ্গে সঙ্গম করত, তা পরিষ্কার নয়।

এই একমুখী জিন প্রবাহ নিয়ান্ডারথালদের সঙ্কটাপন্ন করে তুলেছিল। গবেষকদের বক্তব্য, এমনও হতে পারে, হয়তো উলটোটাও হয়েছিল। অর্থাৎ পুরুষ হোমো স্যাপিয়েন্স ও নারী নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে যৌনতা সফল হয়নি। অথবা সফল হলেও এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত নিয়ান্ডারথাল জিনোমগুলো থেকে তা বোঝার জো নেই। ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার বছরের মধ্যে পৃথিবীতে থাকা নিয়ান্ডারথালদের জিনোমে হোমো স্যাপিয়েন্সের জেনেটিক্সের প্রমাণ নেই। এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩২টি নিয়ান্ডারথাল জিনোম সিকোয়েন্সই করা গিয়েছে। ফলে আরও বেশি নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ না পেলে এবিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।

তবে মানুষের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে নিয়ান্ডারথালদের সম্পর্কেই সবথেকে বেশি তথ্য পাওয়া গিয়েছে। ১৮৫৬ সালে জার্মানির নিয়ান্ডারথাল উপত্যকা থেকে পাওয়া এক ফসিলের নাম জায়গার নামে রাখা হয় নিয়ান্ডারথাল মানুষ। নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদের সাদৃশ্য রয়েছে অনেকটাই। জেনেটিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, আমাদের ডিএনএ-র সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে তাদের।

নিয়ান্ডারথালদের অবলুপ্তি নিয়ে আরও একটা তত্ত্ব রয়েছে। বছর আড়াই আগে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের দাবি ছিল, আজ থেকে ৪২ হাজার বছর আগে পৃথিবীর মেরুদ্বয়ের প্রান্ত বদলের কারণেই অতিকায় স্তন্যপায়ী প্রজাতি মেগাফনা ও নিয়ান্ডারথাল মানবরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এমনই নানা থিওরি।

এদিকে গবেষকরা বলছেন, নতুন গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, যে সময়টাকে হোমো স্যাপিয়েন্সদের আবির্ভাবকাল ধরা হয় তারা বোধহয় তার চেয়ে অনেক আগেই এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিল। এবং মোটামুটি ১০ হাজার বছর এই পৃথিবীতে সহাবস্থান করেছিল মানুষের দুই প্রজাতি। অর্থাৎ এই ‘লড়াইয়ে’ মোটেই রাতারাতি জয় পায়নি আজকের মানুষ। স্ট্রিঙ্গারের দাবি, ”কখনও নিয়ান্ডারথালরা সুবিধা পেয়েছে, কখনও আধুনিক মানুষরা। সুতরাং এর মধ্যে একটা সমতার বিষয় ছিলই।” আর এখানেই প্রশ্ন ওঠে। এই ‘ম্যারাথন’ দৌড়ে হোমো স্যাপিয়েন্স শেষ হাসি হাসল কী করে?

এনিয়ে নানা মত রয়েছে। ভাষা ও শিল্পের জন্ম দেওয়া হোমো স্যাপিয়েন্সরা যে অস্ত্রে জয় পেয়েছিল তার নাম ‘মগজাস্ত্র’। প্রায়শই ফেলুদাকে যে অস্ত্রের উল্লেখ করতে দেখেছি আমরা, সেটাই সভ্যতার বুকে টিকে থাকার লড়াইয়ে আমাদের এগিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া হোমো স্যাপিয়েন্সরা অনেক বেশি সংগঠিতও ছিল। ফলে জ্ঞানের সমাহার ঘটানোও সম্ভব হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত এসবই সম্ভাবনা মাত্র। নানা সম্ভাবনার মধ্যে কোনটা সঠিক, তা জানতে গেলে আরও বেশি নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ দরকার। যতদিন তা না মিলছে, এমনই সব নানা সম্ভাবনা ঘেঁটে আসল সত্যির কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement