shono
Advertisement
Radio Astronomy

আকাশগঙ্গার চেয়েও বড়! ৪ বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে আবিষ্কৃত ৫৩ 'রেডিও কোয়াজার'

চার বিজ্ঞানীর গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে 'আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি'র জার্নালে।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 03:46 PM Nov 21, 2025Updated: 04:07 PM Nov 21, 2025

সম্যক খান, মেদিনীপুর: চার বাঙালির হাত ধরে যুগান্তকারী আবিষ্কার জ‌্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে। মহাকাশে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বড় ৫৩টি দ‌ৈত‌্যাকার রেডিও কোয়াজারের উপস্থিতি আবিষ্কার করলেন তাঁরা। যার বিস্তৃতি ৭২ লক্ষ আলোকবর্ষ পর্যন্ত। প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী সব্যসাচী পালের নেতৃত্বে দুই তরুণ বৈজ্ঞানিক - মেদিনীপুর সিটি কলেজের সৌভিক মানিক, সিধো কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. নেতাই ভূক্তা এবং ড. সুশান্ত কুমার মণ্ডলের যৌথ গবেষণায় প্রকাশ্যে এসেছে ৩৬৯টি রেডিও কোয়াজার। যার মধ্যে ৫৩টি 'দৈত্যাকার'। নয়া আবিষ্কৃত কোয়াজারগুলি প্রায় ০.২ থেকে ৭.২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত প্রসারিত। যা আমাদের নিজেদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গার মতো ৫০টি গ্যালাক্সি এর মধ্যে পাশাপাশি থাকতে পারবে।

Advertisement

আবিষ্কারক বাংলার এই চার জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

যে সকল গ্যালাক্সি থেকে বেতার তরঙ্গ বা রেডিও সিগন্যাল নির্গত হয়, তাদের বলা হয় রেডিও গ্যালাক্সি। প্রত্যেকটি রেডিও গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে থাকে এক বা একাধিক বিশাল ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাক হোল। এই ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরের কাছের অঞ্চল থেকে দুই দিকে জেট নির্গত হয় যা প্রধানত রেডিও তরঙ্গে দৃশ্যমান। এই জেট বিশিষ্ট রেডিও গ্যালাক্সিগুলি প্রায় আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে থেকে আকারে অনেকটাই বড় হয়। কোয়াজার বা কোয়াসি স্টেলার অবজেক্ট হল এক বিশেষ ধরনের রেডিও গ্যালাক্সি যার কেন্দ্রস্থলে সূর্যের ভরের দশ মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন গুণ ভর বিশিষ্ট বিশালাকার ব্ল্যাক হোল থাকে। এই বিশাল ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাক হোলগুলি আশপাশের গ্যাস ও ধুলো আকর্ষণ করে এক জ্বলন্ত উজ্জ্বল ডিস্ক তৈরি করে।

এর মধ‌্যে আবার খুব অল্প সংখ্যক কোয়াজার শক্তিশালী রেডিও বিকিরণ করে এবং তার মধ্যেও আরও ক্ষুদ্র একটি অংশ প্রদর্শন করে মিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে প্রসারিত বিশাল জেট, যেগুলিকে বলা হয় দৈত্যাকার রেডিও কোয়াজার। মহাকাশ বিজ্ঞানী তথা মেদিনীপুর সিটি কলেজের অধ‌্যাপক সব‌্যসাচী পাল জানিয়েছেন, ''এই রেডিও জেটগুলির আকার কোনও সৌরজগৎ বা গ্যালাক্সির সঙ্গে তুলনীয় নয়, আমরা আবিষ্কার করেছি এমন কাঠামো, যা একসঙ্গে ২০ থেকে ৫০টি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সমান দীর্ঘ। প্রতিটি কোয়াজারের কেন্দ্রে থাকে এক বিশাল ব্ল্যাক হোল, যা আশেপাশের পদার্থকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এই পদার্থ যখন ব্ল্যাক হোলের দিকে ঘূর্ণায়মান হয়ে পতিত হয়, তখন তা প্রচণ্ড তাপে আয়নিত হয়ে যায় এবং ডিস্কের কেন্দ্রে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই ক্ষেত্রগুলি প্লাজমাকে আলো-গতির কাছাকাছি বেগে ত্বরান্বিত করে ব্ল্যাক হোলের দুই মেরুর দিক থেকে ছুঁড়ে দেয়। তৈরি হয় দুটি বিরাট রেডিও জেট, যা কোটি কোটি বছর ধরে মহাকাশে প্রসারিত হয়ে রেডিও লোব গঠন করে। এই জায়ান্ট কোয়াজারগুলি আমাদের বোঝাতে সাহায্য করে কিভাবে রেডিও গ্যালাক্সিগুলির শেষ পর্যায়ের বিবর্তন ঘটে এবং তারা যে ইন্টারগ্যালাকটিক মিডিয়ামে প্রসারিত হয়, তার প্রকৃতি কেমন তা জানতেও সাহায‌্য করে।''

এই যন্ত্রের সাহায্যে নয়া কোয়াজার আবিষ্কৃত হয়েছে।

সবমিলিয়ে বলা যেতে পারে, এই আবিষ্কার শুধু ভারতের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার এক অসাধারণ উদাহরণই নয়। বরং মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিশাল ও বিরল রেডিও কোয়াজারগুলির উৎস ও বিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। চার মহাকাশ বিজ্ঞানীর এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে 'আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি'র বিখ্যাত পিয়ার-রিভিউড জার্নালে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চার বাঙালির হাত ধরে যুগান্তকারী আবিষ্কার জ‌্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে।
  • আকাশগঙ্গার চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বড় ৫৩টি দ‌ৈত‌্যাকার রেডিও কোয়াজার আবিষ্কৃত হয়েছে।
  • তাঁদের গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে 'আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি'র জার্নালে।
Advertisement