রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: কালাচ ও গোখরো সাপের ডিম কৃত্রিমভাবে ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। কৃত্রিমভাবে সাপের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরির এই ঘটনা প্রথম ঘটল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে। সরকারি উদ্যোগে কালাচের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরির এই ঘটনা গোটা রাজ্যে প্রথম বলেও দাবি করছেন অনেকে। এই খুশির খবর জানিয়েছে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ মে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে খবর আসে জঙ্গল লাগোয়া সাতপুকুরিয়া গ্রামের একটি ঘরে গোখরো রয়েছে। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের র্যাপিড রেসপন্স টিম তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌছয়। দেখা যায় এক স্ত্রী গোখরো ২৭টি ডিম পাহাড়া দিয়ে বসে আছে। সাপ ও সাপের ডিম উদ্ধার করে বনদপ্তর। একইভাবে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান লাগোয়া গ্রাম থেকে ১২ জুন ৭টি ডিম-সহ একটি ওয়াল’স ক্রেইট (কালাচ) উদ্ধার হয়।
[আরও পড়ুন: ন্যায় সংহিতা খতিয়ে দেখতে কেন কমিটি? মুখ্যমন্ত্রীর রিপোর্ট তলব রাজভবনের]
প্রথমে গোখরো সাপের ২৭টি ডিম উদ্ধারের পরেই সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সহায়ক নবজিৎ দে। তিনিই সাপের ডিম যাতে নষ্ট হয়ে না হয় তার উদ্যোগ নেন। বালি, প্লাস্টিকের পাত্র ও জল দিয়ে কৃত্রিমভাবে ইনকিউবেটর তৈরি করে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। সেই ইনকিউবেটরে গোখরো সাপের ডিম রেখে পর্যায়ক্রমে তা পর্যবেক্ষণ করে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। ৯ জুলাই দুপুর আড়াইটের সময় প্রথম ডিম ফুটে গোখরো সাপ বেরিয়ে আসে। তার পর ধীরে ধীরে ২৬টি ডিম ফুটে ২৬টি গোখরোর বাচ্চা বেরয়। একটি ডিম পচা থাকায় সেই ডিমটিকে আগেই সরিয়ে রেখেছিল বনদপ্তর।
একইভাবে কৃত্রিম ইনকিউবেটরে ৫ জুলাই প্রথম দুটি ডিম ফুটে দুই কালাচ বেরিয়ে আসে। পরে ধাপে ধাপে মোট ৬ টি কালাচের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। একটি কালাচের ডিম পচা থাকায় আগেই সেটিকে ফেলে দিয়েছিল বনদপ্তর। উল্লেখ্য, এর আগেও সাপের ডিম-সহ সাপ উদ্ধার করেছে বনদপ্তর। কিন্তু জঙ্গলে যেখানে সাপ ছাড়া হয় সেখানেই ডিমগুলোকে রেখে আসা হত। এবারই প্রথম উদ্ধার হওয়া সাপ জঙ্গলে ছেড়ে দিলেও সাপের ডিম কৃত্রিমভাবে তৈরি ইনকিউবেটরে ফোটানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই কাজে সফল হয় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সহায়ক নভজিৎ বলেন, “সাপের ডিম-সহ সাপ উদ্ধারের সময় সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী জলদাপাড়াতেই ছিলেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর পরামর্শে কৃত্রিম ইনকিউবেটর তৈরি করে ডিমগুলোকে রাখা হয়। তার আগে ডিমগুলোকে পরীক্ষা করি আমরা। পচা ডিম আলাদা করে ফেলা হয়। পর্যায়ক্রমে পর্যবেক্ষণ ও তাপমাত্রার হেরফের করা হয়। অবশেষে সাফল্য। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে এভাবে কৃত্রিমভাবে সাপের ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরির ঘটনা এটাই প্রথম।" সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী বলেন, “অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা। প্রকৃতির ভারসাম্য তথা সরীসৃপ রক্ষায় জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের এই কাজ পথ দেখাবে। আমি পরামর্শ দিয়েছি মাত্র।"