সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাবিশ্বের শত, সহস্র অজানা বিষয় নিয়ে অনেকেরই কৌতূহলের শেষ নেই। আর অজানাকে জানতে নিরন্তর গবেষণাকাজ চলছে। সেই পড়াশোনার ভিত্তিতে এবার শনির 'চাঁদ' অর্থাৎ শনি গ্রহের উপগ্রহ টাইটানকে নিয়ে নয়া তথ্য প্রকাশ্যে এল এবং তা এতটাই চমকপ্রদ যে রসায়নের মূল ভিত্তিই বদলে যেতে পারে! সাধারণত সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে বলেই প্রাথমিক বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি। কিন্তু টাইটানে এমন কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে চলেছে, যা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক অনুমান, সমমেরু একে অপরের সংস্পর্শে এলে নতুন কোনও পদার্থ তৈরি হচ্ছে সেখানে। এটাই যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে তো রসায়নের নতুন পাঠ নিতে হবে।
ঠিক কী ঘটছে শনির বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটানে? নাসার জেট প্রপালশন ল্যাব এবং সুইডেনের কালমারস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যৌথ গবেষণা চালানো হয়েছে। তাতে জানা যাচ্ছে, তার হিমাঙ্ক মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় একই রকম ধর্ম রয়েছে, এমন সামগ্রী নিজেদের কাছাকাছি এলে অন্যরকম বিক্রিয়া হয়। নতুন রকমের কেলাস বা ক্রিস্টাল তৈরি করে। যা সাধারণ বৈজ্ঞানিক ঘটনার পরিপন্থী। বলা হচ্ছে, তেলে-জলে যেমন মিশ খায় না, সেরকমই হওয়ার কথা এখানেও। কিন্তু টাইটানে তা ঘটছে না। যা ঘটছে, তা একেবারেই ব্যতিক্রম বলা চলে। ঘন নাইট্রোজেন ও মিথেন গ্যাসে ভরপুর। তার জেরে তার রং অনেকটা কমলা ধরনের। এর সঙ্গে লক্ষ কোটি বছর আগের পৃথিবীর প্রাথমিক দশার মিল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা হাইড্রোজেন সায়ানাইড নামে একটি অণুর আচার-আচরণের উপর জোর দিচ্ছেন। এটি টাইটানের বায়ুমণ্ডলে রয়েছে। এর সঙ্গে মিথেন, ইথেন অর্থাৎ হাইড্রোকার্বনের বিক্রিয়া ঠিক কেমন, তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, টাইটানে থাকা হাইড্রোকার্বন তার পরিবেশের কারণে হাইড্রোজেন সায়ানাইডের অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ক্রিস্টাল ল্যাটিস বা কেলাস তৈরি করছে। এবং তা স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছে।
উচ্চস্তরের রসায়নবিদ্যা অনুযায়ী, হাইড্রোজেন সায়ানাইড এমন এক উপাদান, যা বহু প্রাণীর অণু গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে এখান থেকে টাইটানের বিভিন্ন জটিল সমীকরণের সহজ ব্যাখ্যা তো হতেই পারে, উপরন্তু প্রাণের সন্ধান নিয়েও অনেক কিছু জানা যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। তবে টাইটান নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষায় এমন সব ফলাফল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বিস্মিত খোদ নাসার বিজ্ঞানীরা। এই ঘটনা সাধারণ রসায়নের প্রাথমিক নিয়মাবলিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে রীতিমতো!
