সুকুমার সরকার, ঢাকা: জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া ধ্বজা লাগানোর অভিযোগ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’-এর ২ সন্ন্যাসী-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহ মামলা দায়ের। কয়েকদিন আগেই এই সংগঠনের ডাকে সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের হাজার হাজার হিন্দু। নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮ দফা দাবিও রেখেছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, বন্দরনগর চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকার উপরে গেরুয়া রঙের আর একটি পাতাকা টাঙানো হয়। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ওঠে সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী ও ইসকন প্রবর্ত্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ দাশ ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে। এছাড়া অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে আরও ১৭ জন। ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি সকলের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় এই রাষ্ট্রদোহ মামলা দায়ের করেন বলে খবর। এনিয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মহম্মদ তারেক আজিজ বলেন, ইতিমধ্যে এই মামলায় রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ নামে দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। অন্যদিকে, এই মামলা ও গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বাংলাদেশের হিন্দুরা। রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসেই বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে বাংলাদেশে। ব্যাপক গণরোষে গদিচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশে অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। তাই অধিকার রক্ষার দাবিতে গত ২৫ অক্টোবর সনাতন জাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের লালদিঘির ময়দানে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। যোগ দেন হাজার হাজার হিন্দু।
ওই সমাবেশেই চিন্ময়কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, “কেউ যদি আমাদের এদেশ থেকে উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে এ ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। এদেশ আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। কোনও গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। আমরা আর চুপ থাকব না। অধিকারের জন্য মাঠে নেমেছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত সনাতনী ভূমিপুত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, মৃত্যু হলেও রাজপথ ত্যাগ করব না। আমরা সংখ্যালঘু বলে আন্তর্জাতিক সনদ হিসেবে অধিকার দেওয়ার ভয়ে আমাদের বাংলাদেশি পরিচয় প্রদান করতে চাইবেন। কিন্তু আমাদের নৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন এ প্রহসন আমরা আর মানব না।” এই মামলা ও গ্রেপ্তারি ঘটনায় ফের এক বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।