রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: রাওয়ালপিন্ডিতে কি ক্রিকেটার শাকিব-আল-হাসানের ‘শেষ অঙ্ক’ লেখা হচ্ছে? পাকিস্তান সিরিজের পর কি বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারকে আর দেশের জার্সিতে খেলতে দেখা যাবে না কখনও?
যুক্তি বিচারে যতই অলীক শোনাক। স্বাভাবিক বোধ অনুপাতে যতই হাস্যকর লাগুক। পদ্মাপারের আমজনতার মনে এ হেন একটা ভাবনার ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যাঁরা মনে করেন, রাওয়ালপিন্ডিতে সম্ভবত বাংলাদেশ জার্সিতে কেরিয়ারের শেষ ম্যাচটা খেলে ফেললেন শাকিব। কপাল ভালো হলে, পাকিস্তানের সঙ্গে পুরো সিরিজটা পাবেন। কিন্তু তার বেশি কিছুতেই নয়!
আর এর নেপথ্যে এক পোশাক কারখানা কর্মীর হত্যা মামলা। এবং সেটাকে ঘিরে শনিবার প্রেরিত এক আইনি নোটিস।
শনিবার পদ্মাপারের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে একটা আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। যে নোটিসে লেখা, শাকিব যেহেতু হত্যা-মামলায় অভিযুক্ত, তাই অবিলম্বে দেশের টিম থেকে তাঁকে বাদ দিতে হবে! আর মামলাটা যেহেতু ফৌজদারি, তাই আইসিসি ও বাংলাদেশ বোর্ডের আইন মেনে সেই ক্রিকেটারকে সাময়িক ভাবে সরাতে হবে। পুরো বিষয়টা বিচারাধীন বলে শাকিবকে শুধু টিম থেকে সরালেই চলবে না! বিচারের কারণে অবিলম্বে তাঁকে দেশেও ফেরত আনতে হবে!
পদ্মাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এরপরই এক বৈঠকে বসে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড)। পরে নতুন বিসিবি প্রেসিডেন্ট স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান যে, তাঁরা এখনও সরকারি ভাবে কোনও আইনি নোটিস হাতে পাননি। আর পুরো বিষয়টা এখনও তদন্ত সাপেক্ষ। তাই চলতি রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে শাকিবের খেলতে কোনও অসুবিধে নেই। টেস্টের শেষ দিকে সাকিবের বিষয়টা নিয়ে আবার বসা হবে। আশা করা হচ্ছে, তত দিনে শাকিবের বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
[আরও পড়ুন: কেকেআরের অধিনায়ক হওয়ার পথে সূর্যকুমার? ‘মিস্টার ৩৬০’-কে নিয়ে তুঙ্গে জল্পনা]
দেশজ বোর্ড কর্তাদের রকমসকম দেখে ও পার বাংলার সাংবাদিকদের কারও কারও মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো রাখা হবে না প্রাক্তন অধিনায়ককে। যা শুনে শাকিব-ঘনিষ্ঠরা আবার পাল্টা বলছেন, বাঁ হাতি অলরাউন্ডার না খেললে ক্ষতি যত না তাঁর, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশ টিমের। তা ছাড়া শাকিবকে যে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ হাস্যকর। কারণ, ঘটনাটা যখন ঘটে, সাকিব দেশেই ছিলেন না। তা হলে কোন যুক্তিতে তাঁকে জড়িয়ে ফেলা হল? কী করে তাঁর নামে সোজা আইনি নোটিস বার করে ফেলা হয়? এঁদের মতে, পুরোটাই রাজনৈতিক জিঘাংসা চরিতার্থ করা চলছে শাকিবের সঙ্গে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তিনি সাংসদ ছিলেন। এখন হাসিনা সরকারের পতনের পর শাকিবকে ‘ফাঁসানো’-র চেষ্টা করছে বর্তমান শাসক দল!
[আরও পড়ুন: টেস্ট চলাকালীন বাবা হলেন শাহিন, নবজাতকের জন্য বিশেষ উদযাপন পাক পেসারের]
দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়। এঁদের আরও বক্তব্য, বাংলাদেশ যদি টিমে শাকিবকে না রাখে, রাখবে না। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিরে চলে যাবেন। সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হল, বাংলাদেশের হয়ে খেলার রাস্তা যদি শাকিবের ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে অন্য পথ খুলতে সমস্যা হবে না। বলা হল, শাকিবের স্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। শাকিবের সমস্যা হবে না বাংলাদেশের জার্সি থেকে অবসর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলতে। আর চার বছরের মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক। যেখানে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। টিম নামাবে যুক্তরাষ্ট্র। আর শাকিবের মতো ক্রিকেটারকে টিমে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তারা উপেক্ষা করবে তো? এ-ও বলা হল, দেশের পরিস্থিতি উন্নত না হলে প্রয়োজনে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও খেলবেন না শাকিব। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ তো বিশ্বে শুধুমাত্র বাংলাদেশে নেই! উল্টে ওয়াকিবহাল মহলের বিনীত প্রশ্ন, শাকিবের অর্ধেক ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রিকেটার এ মুহূর্ত বাংলাদেশ টিমে আছে তো? বা আসবে তো? তা হলে ক্ষতিটা কার?