গৌতম ব্রহ্ম: ঝাড়ফুঁকে ভরসা কমছে মানুষের৷ ‘খদ্দের’ ধরতে তাই সরকারি হাসপাতালে দালাল নামিয়েছে ওঝারা৷
হাসপাতালে বেড নেই, চিকিৎসা হবে না৷ প্রথমে এমন ভয় দেখানো হচ্ছে৷ কাজ না হলে রোগীর পরিবারের উপর জোর খাটানো হচ্ছে৷ বারাসত হাসপাতালে এমনই ঘটনা ঘটেছে৷ সাপে-কাটা এক রোগীকে হাসপাতাল থেকে জোর করে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল এক দালাল৷ অভিভাবকরা সচেতন হওয়ায় ‘অঘটন’ অবশ্য ঘটেনি৷ হাসপাতালে চিকিৎসা করেই সাপে-কাটা ওই নাবালিকা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল৷
গত শনিবার রাতে কালাচ সাপ দংশন করেছিল অশোকনগরের নোটনি গ্রামের বাসিন্দা বিভাস দাসের মেয়ে শিপ্রাকে৷ এগারো বছরের মেয়েকে রাতেই অশোকনগর হাসপাতালে নিয়ে আসেন বিভাসবাবু৷ কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্য শিপ্রাকে ১২ ভায়াল এভিএস দেন৷ রবিবার অন্য এক চিকিৎসক শিপ্রাকে বারাসত হাসপাতালে রেফার করে দেন৷ মেয়েকে নিয়ে রবিবার রাতে বিভাসবাবু আসেন বারাসত হাসপাতালে৷ সেখানেই দালালের খপ্পরে পড়েন তিনি ও তাঁর স্ত্রী৷ বিভাসবাবুর অভিযোগ, ওঝার কাছে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রীতিমতো জোর করা হয় তাঁকে৷ বিভাসবাবু রাজি না হওয়ায় তাঁর স্ত্রীকে পাকড়াও করে৷ শেষে বিভাসবাবু পুলিশ ডাকতে গেলে পালিয়ে যায় ওই দালাল৷
বারাসতের চিকিৎসক অমিত আগরওয়ালের অধীনে ভর্তি করা হয় শিপ্রাকে৷ দেখা যায়, অশোকনগরে পাওয়া এভিএসের গুণেই শিপ্রা সুস্থ হয়ে গিয়েছে৷ রাতটুকু পর্যবেক্ষণে থাকার পর সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছুটি পায় শিপ্রা৷ বাড়ি ফিরে রাতে ডা. অপর্ণা ভট্টাচার্যকে ফোন করে ধন্যবাদও জানান বিভাসবাবু৷ তখনই দালালের বিষয়টি উঠে আসে৷ জানা যায়, ওই দালাল বারাসতের মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘুরঘুর করছিল৷ বিভাসবাবুদের ‘অসহায়’ অবস্থার সুযোগ নিয়ে ওই দালাল ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়৷ বলে, “কাছেই এক ধন্বন্তরী ওঝা রয়েছেন৷ যেকোনও সাপের বিষ নামাতে পারেন৷ ওখানে মেয়েকে নিয়ে চলুন৷ এখানে থাকলে মেয়ে বাঁচবে না৷” বিশিষ্ট চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার থেকে অনেক বেশি মানুষ সাপের কামড়ে মরেন৷ তা-ও এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রয়াস সেভাবে গতি পায়নি৷
বিভাসবাবু অবশ্য হাসপাতালের উপরই ভরসা রেখেছেন৷ শুধু বিভাসবাবু নন, এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি অনেকেই হয়েছেন৷ গোসাবাতে কিছুদিন আগে এর থেকেও ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল৷ একটি সাপে-কাটা রোগীকে হাসপাতালের বেড থেকে তুলে ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিল একদল মানুষ৷ এমনকী চিকিৎসকদের উপর চড়াও হয়েছিল তারা৷
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওঝাদের নিয়ে কর্মশালা করা উচিত সরকারের৷ একই মত ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখার সম্পাদক সৌম্য সেনগুপ্তর৷ তিনি জানিয়েছেন, সাপের কামড়ে মৃত্যু হওয়া রোগীর ক্ষতিপূরণে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে৷ এর অর্ধেকও যদি প্রচারে ব্যবহার হত তাহলে মানুষকে চেষ্টা করেও ভুল বোঝাতে পারত না ওঝারা৷
The post ঝাড়ফুঁকের ‘খদ্দের’ ধরতে হাসপাতালে ওঝার ‘দালাল’ appeared first on Sangbad Pratidin.