দেব গোস্বামী, বোলপুর: ফলক বিতর্কের মাঝেই এবার বিশ্বভারতীয় উপাচার্যের বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR) দায়ের। বেআইনি কাজ করার অভিযোগে এবার বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। অভিযোগ, শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পত্তি হওয়া সত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়াই উপাসনাগৃহ, ছাতিমতলা, শান্তিনিকেতন গৃহ-সহ মূল আশ্রম এলাকায় হঠাৎ করে অ-রাবীন্দ্রিক ফলক লাগায়। যা শান্তিনিকেতনের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে এবং উপাসনা গৃহের শান্তি বিঘ্নিত করছে। শনিবার শান্তিনিকেতন থানার দ্বারস্থ হয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট।
বিশ্বভারতীর উপাসনা গৃহ,মূল আশ্রম প্রাঙ্গন শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পত্তি। তাঁর দেখাশোনার দায়িত্বে বিশ্বভারতী এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। সবমিলিয়ে ১৫ দশমিক ৩ একর জায়গা, যার খতিয়ান নম্বর ১১২২৭। ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কুমার বলেন,”আমাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ এবং অনুমতি না নিয়েই শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের জায়গার ফলক বসায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অতীতে কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও শান্তিনিকেতনে নামফলক দেওয়ার রীতিও নেই। আর আমাদের সম্পত্তির উপরে ফলক দেওয়ার কোন ক্ষমতায় নেই কর্তৃপক্ষের। আইন বিরোধী কাজ করেছেন। এই মর্মেই আমরা শান্তিনিকেতন থানায় উপাচার্যের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: ‘বাকিবুরকে চিনতাম’, ইডি তল্লাশির মাঝে স্বীকারোক্তি জ্যোতিপ্রিয় ‘ঘনিষ্ঠ’ ব্যবসায়ীর]
যদিও এ প্রসঙ্গে আক্ষেপ করে শান্তিনিকেতনের পড়ুয়া-প্রাক্তনী-আশ্রমিকরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে বর্তমান উপাচার্য বিশ্বভারতীর হর্তা-কর্তা-বিধাতা হয়ে গিয়েছেন। প্রতি পদে-পদে কর্মী-পড়ুয়া-অধ্যাপকদের অপমান থেকে শুরু করে, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ কেউ অস্বীকার করছেন তিনি। নিজের মতো করেই একের পর এক ঐতিহ্য ভেঙে ফেলতে চাইছেন। চলতি বছরের ৮ নভেম্বর মেয়াদ শেষ হচ্ছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এরই মাঝে ছুটিতে রয়েছেন তিনি। মেয়াদ কি বৃদ্ধি পাবে, জোর জল্পনা শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতনে। যদিও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের থানায় অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি মেলার পরই ওয়ার্ল্ড ‘হেরিটেজ’ ফলক বসানো হয় শান্তিনিকেতনে। আর সেই ফলকে নেই স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম! বদলে রয়েছে আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, আশ্রমিক ও রবীন্দ্রঅনুরাগীরা। বিতর্ক অবস্থান প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে শান্তিনিকেতনে। অভিযোগও জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রীকেও। ফলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম না থাকায় প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটে মঞ্চ বাঁধে অবস্থান শুরু করেছে তৃণমূল। নবমদিনেও অবস্থান অব্যাহত। এরই মাঝে ফলক বিতর্কে নয়া মোড়।