সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়: গত সপ্তাহে ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা ভীত শেয়ার বাজার। যুদ্ধ বিষয়টা শেয়ার বাজার কেন, সবাই ভয় পায়। কিন্তু শেয়ার বাজার কম ভয় পায়। তার কারণ হল, এখনকার যুদ্ধগুলো খুবই কম সময়ের জন্য হয়। তারপরই একটা সমঝোতার সুর ভেসে আসে। শেয়ার বাজার সেটা বোঝে বলেই আগেভাগে পড়তি দামে শেয়ারগুলো কেনে। যেটা আমরা দেখতে পেলাম গত সপ্তাহে। তার পর বাজার যথারীতি সম্বিত ফিরে পায়। যদিও এই মুহূর্তে বেশ কিছু ‘ইফস অ্যান্ড বাটস’ আছে। সেজন্য বাজার এক নাগাড়ে বেড়ে যাবে সেটা মনে হচ্ছে না। আবার ভয়টা কমেছে বলে, শেয়ার বাজার যে পড়তে আরম্ভ করবে সেটাও মনে হচ্ছে না। এই সময়ে দেখা গেল দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলি শেয়ারে লগ্নি করেছে। এটা থেকে একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে, সস্তা দামে এখন কিনলে, পরবর্তী সময়ে ক্ষতি হবে না।
[সীমান্তে লাগাতার পাক উসকানি, জরুরি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী]
এইরকম মানসিকতা আমাদের মধ্যেও থাকা উচিত। সাহস থাকলে লাভের মুখ দেখতে পাওয়া যাবে আগামিদিনে সেটা বুঝতে পারছি। প্রশ্ন হচ্ছে, সাহসটা আমাদের আসবে কি না। সাধারণভাবে আসবে না। কারণ দেখা যাচ্ছে, সাধারণ লগ্নিকারীরা মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। বাড়তি টাকা তারা লগ্নি করছে না। এটা গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে। এটা অবশ্যই খারাপ সময়। যে সময়ে লগ্নি করা উচিত সেই সময়ে লগ্নি হচ্ছে না। সুতরাং আপনারা যাঁরা মিউচুয়াল ফান্ডে SIP-এর মাধ্যমে বা এককালীন লগ্নি করেন সেটা বন্ধ করবেন না, চালিয়ে যান। কারণ, তাতে আখেরে উন্নতি হবে।
যাঁরা শেয়ার বাজারে SIP করেন তাঁরা টাকার পরিমাণ এই সময়ে বাড়িয়ে দিতে পারেন। কেন না এই সব সময়ে শেয়ারের দাম কমের দিকে থাকে বলে বাড়তি টাকাটা SIP-এ লাগিয়ে দিন। পরে যখন দাম বাড়বে, তখন না হয় দু’একমাস টাকা লগ্নি করবেন না। হিসেবটা আগামী সপ্তাহে কোন শেয়ারের দাম বাড়বে তার উপর নয়। হিসেবটা হচ্ছে আগামিদিনে কোন শেয়ার বাড়বে তার উপর। তারই মধে্য শেয়ার বাছাই করাটা বড় কাজ। আপনাদের মতে যে সব উচ্চমানের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি, সেখানেই বিনিয়োগ করাটা ঠিক হবে।
সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী যে সময়ে আমরা এই লেখা পড়ছি, ততক্ষণ এত ধাক্কা থাকার কথা নয়। সারা দেশে ঠান্ডার প্রকোপটা এখনও যায়নি। আমি দিল্লিতে বসে লেখাটা লিখছি। এখানে সবাই বলছিলেন মার্চ মাসে এত ঠান্ডা তাঁরা কখনও দেখেননি। এটা কলকাতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর থেকে একটা মানে বের হচ্ছে যে, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য প্রকৃতির চরিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। আমার ধারণা, এবার গরমও বেশি পড়বে। আর সেখান থেকে উঠে আসছে Voltas কেনার পরিকল্পনা। এই একই যুক্তিতে Symphony কেনা যায়। Voltas-এর দাম বন্ধ হয়েছে ৫৭৫ টাকায়। সম্প্রতি দাম ৫৫০ টাকা পর্যন্ত এসেছিল। সেইখানে ভাল একটা সাপোর্ট তৈরি করে, আবার উপরের দিকে যাত্রা শুরু করে। তাই এই সব জায়গায় কিনলে ৫৫০ টাকা স্টপ থাকবে। উপরে ৫৮৫-৫৯০ ধাক্কা আছে। সেটা পেরোতে পারলে সামনে ধাক্কার জায়গা হবে ৬১২, ৬২৭ লেভেলটা। Symphony-র দাম এখন ১২৭৯। ফেব্রুয়ারি মাসে ১১৫০-র কাছে একটা সাপোর্ট তৈরি করে। সেখান থেকে অল্প সময়ে বাউন্স ব্যাক করে এই জায়গায় এসেছে। ব্রেকআউট করেছে ১২৩০-র উপরে। সুতরাং এই লেভেলকে আপাতত স্টপ করতে হবে। উপরে ধাক্কার জায়গা হবে ১৩১০-১৩৪০।
বাজারে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণে ভয় এবং আতঙ্ক ছড়াবে। এখন এই পর্যায়ে এটাই চলবে। সাধারণ নির্বাচনের বাজনা বেজে যাবে মার্চ মাসেই। মার্চ মাসে আবার ট্যাক্সের ব্যাপার আছে। তার জন্য বাজার সেই দিকে নজর দেবে। এ ছাড়াও থাকবে NAV (Net Asset Value) Adjustment. Mutual Fund-এর NAV ভাল করার চেষ্টা করবে Fund Manager-রা। তাই অনেক মিডক্যাপ বা স্মলক্যাপ শেয়ারের দাম অকারণে বাড়বে। এই কারণে বিভিন্ন শেয়ারে নজর থাকবে। রবারের দাম বেড়ে আছে। তাই টায়ার প্রস্তুতকারক কোম্পানির শেয়ারে সংশোধন আসবে। যেমন Apollo Tyre, JK Tyre, CEAT Tyre. Apollo Tyre-এ ২১০ টাকা ভাল সাপোর্ট। তার নিচে ২০২, ১৯৫ সাপোর্ট। JK Tyre-এ নিচে ৮২, ৭৮ সাপোর্ট। CEAT Tyre ১০৫০-র নিচে দুর্বল থাকবে। নিফটি নিয়ে বলা যায়। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত ১১০২০-র উপর নিফটি বন্ধ না হয়। ততক্ষণ উপরে বেচার কাজ করতে হবে। যদি ১১০২০-র উপরে যায়, সামনে ধাক্কা ১১৩০০ অধিক যাবে। নিচে ১০৯০০-১০৭০০ সাপোর্ট-এর কাজ করবে।
[বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক? ঘটনার প্রমাণ উপগ্রহচিত্রই]