সন্দীপ্তা ভঞ্জ: শার্লক হোমস যদি বাঙালি হতেন, কেমন হত? স্যর আর্থার কোনান ডয়েলের আইকনিক গোয়েন্দা চরিত্রকে ঘিরে বাঙালি গোয়েন্দাপ্রেমীদের ফ্যান্টাসিও কম নয়। বাঙালিদের নিজস্ব সত্যান্বেষী 'ফেলুদা', 'ব্যোমকেশ' রয়েছেন ঠিকই, তবে শার্লক হোমসকে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালি গোয়েন্দা হিসেবে কেমন লাগবে? সেই কল্পনার জাল সম্ভবত মনে মনে অনেকেই বুনেছেন। আর বাঙালিদের সেই শার্লক ফ্যান্টাসিকেই এবার সৃজিত মুখোপাধ্যায় বাস্তবায়িত করলেন 'শেখর হোম'কে এনে।
সম্প্রতি জিও সিনেমায় মুক্তি পেয়েছে 'শেখর হোম' (Shekhar Home Review)। যেখানে বাঙালি শার্লকের চরিত্রে দেখা গেল কে কে মেননকে। মোট ছয় পর্বের সিরিজ। শার্লক হোমসের একেকটা রহস্য সমাধানের আঁধারে তৈরি। লন্ডনের কুয়াশা ঘেরা রাস্তায় ওভারকোট, ডিয়ারস্টকার ক্যাপ পরনে আদ্যোপান্ত সাহেবি শার্লককে সৃজিত নিজের মতো করে বাঙালি গোয়েন্দা শেখরে পরিণত করে নিয়েছেন। প্রতিটা গল্পের সঙ্গে কখন যে শার্লক প্রত্যন্ত গ্রাম কিংবা শহর কলকাতার রাস্তায় ঘোরা বাঙালি শেখর হয়ে গিয়েছেন, সেটা বেশ দক্ষতার সঙ্গে দেখালেন সৃজিত। কে কে মেননের অভিনয় দেখে বোঝা গেল, তিনি ছাড়া এই শার্লকরূপী নতুন গোয়েন্দা চরিত্র এত সহজ সরলভাবে অন্য কেউ ফুটিয়ে তুলতে পারতেন কিনা সন্দেহ! শেখর হোমের চরিত্রে বলিউডের মেননকে দেখার মতো। সিরিজ দেখতে বসে মনে হয়, তিনি এত সহজে এই চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছেন যেন, কলকাতার সঙ্গে তাঁর কত পুরনো সম্পর্ক। শার্লক হোমস যেন দীর্ঘ কত বছর ধরে গোপনেই কলকাতার অলিগলিতে রহস্যের সমাধান করে বেড়াচ্ছেন। ঠিক যতটা গোয়েন্দা মগজাস্ত্রের ধার, ততটাই কৌতূকরসে পরিপূর্ণ সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের শেখর হোম।
শার্লক হোমের এহেন 'অ্যাডাপশন' এর আগে ভারতে হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। সৃজিত অবশ্য শার্লককে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছেন 'ফেলুদা'র পর তাঁর দ্বিতীয় গোয়েন্দা সিরিজ 'শেখর হোমস'-এর জন্য। পোক্ত চিত্রনাট্য। ডয়েলের লেখার আঁধারে সংলাপগুলোও দারুণ মানিয়ে যায়। সৃজিত চমক দিয়েছেন কাস্টিংয়েও। এই শার্লক যেহেতু কলকাতার গোয়েন্দা, সেই প্রেক্ষিতে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া রাখতে কাস্টিংয়েও চমক দিয়েছেন পরিচালক। শেখর হোমসের দাদা মৃন্ময়ের চরিত্রে কৌশিক সেন। লোনপুর, যে জায়গাটিকে ঘিরে সিরিজের গল্প সাজিয়েছেন সৃজিত, সেখানকার পুলিশ আধিকারিকের চরিত্রে রুদ্রনীল ঘোষ এবং বিয়ে পাগল এক ব্যবসায়ীর চরিত্রে দেখা গিয়েছে মীর আফসার আলিকে। এছাড়াও সিরিজজুড়ে একাধিক বাঙালি শিল্পী নজর কাড়লেন।
এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, শেখরের দাদার ভূমিকায় কৌশিক সেন যেমন অনবদ্য, তেমনই চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে রুদ্রনীল কিংবা মীরও চরিত্রের গাম্ভীর্যের পাশাপাশি কমিক এলিমেন্ট বেশ ভালোভাবে তুলে ধরেছেন। এই গোয়েন্দা সিরিজে দাদা-ভাইয়ের (কৌশিক, কে কে মেনন) সম্পর্কের খুনসুঁটিও বেশ উপভোগ্য। ইরাবতীর চরিত্রের রসিকা দুগ্গল ততোধিক অনবদ্য। তবে সিরিজের শেষপাতে যে ট্যুইস্ট রয়েছে, তাতে অবাক করে দিলেন রণবীর শোরে। যাঁকে শেখর হোমের বন্ধু তথা অ্যাসিস্ট্যান্টের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। সেই চমক না হয় জিও সিনেমার পর্দায় রেখেই উপভোগ করুন।