সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একসময় ফুচকা-ফল বিক্রি করে পেট চালাতে হয়েছে। মুম্বইয়ের ১৭ বছরের ‘বিস্ময় কিশোর’ যশস্বী জয়সওয়ালই মঙ্গলবার বিশ্বমঞ্চে গোটা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট পেয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দল। আর অপরাজিত শতরান হাঁকিয়ে ম্যাচের নায়ক হয়েছেন যশস্বী। সেই তরুণ তুর্কির জন্যই এবার গলা ফাটালেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার শোয়েব আখতার। যশস্বীকে দেখে প্রত্যেক তরুণ পাক ক্রিকেটারের শেখা উচিত, মন্তব্য করতে পিছপা হলেন না রাওয়ালপিণ্ডি এক্সপ্রেস।
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্যাট হাতে যশস্বীর অকুতোভয় ইনিংস পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয় বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন শোয়েব। যশস্বীর এমন পরিণত ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে তাঁকে। একইসঙ্গে তিনি আশাবাদী, একদিন বিরাটদের পাশে ভারতের সিনিয়র টিমে খেলবে যশস্বী। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ম্যাচ শেষে শোয়েব জানিয়েছেন, ‘পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে অভিনন্দন বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছনোর জন্য। এটা একটা বিরাট কৃতীত্ব। কিন্তু সেমিফাইনালের পারফরম্যান্স মোটেই ফাইনালে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। শোচনীয় ফিল্ডিং, লজ্জা হওয়া উচিত। ফাইনালে যাওয়ার জন্য তোমাদের বদলে ভারতই যোগ্য দল।’
[আরও পড়ুন: অনবদ্য যশস্বী, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত]
এরপরই যশস্বীর সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেছেন শোয়েব। উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের ভাদোহির এক মুদি দোকানির ছেলে যশস্বী মাত্র এগারো বছর বয়সে মায়ানগরী মুম্বইয়ে চলে আসে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় জেরবার যশস্বীর স্বপ্ন বারবার হোঁচট খায়। একসময় মুম্বইয়ের মুসলিম ইউনাইটেড ক্লাবের পাশে একটা অস্থায়ী তাঁবুই ছিল তাঁর ঠিকানা। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্য বছর তিনেক আজাদ ময়দানের সামনে কখনও ফুচকা আবার কখনও ফল বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ভাগ্য বদলায় ২০১৫ সালে, স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতা গিলস শিল্ড ক্রিকেট টুর্নামেন্টে মোট ৩১৯ রান ও বল হাতে ১৩টি উইকেট নিয়ে রেকর্ড বুকে নাম তোলে যশস্বী। তারপর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
তার পারফরম্যান্স ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর কাড়তেই আইপিএল নিলামে তাকে কেনার জন্য ঝাঁপায় তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকায় কিনে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। তাকে এদিন কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবও। কিন্তু যশস্বীকে শেষপর্যন্ত তুলে নেয় রাজস্থান। সেই সুবাদে একসময়ের ফুচকা বিক্রেতা রাতারাতি কোটিপতি ক্রিকেটারে বদলে গেল। সেকথা উল্লেখ করে পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উদ্দেশে শোয়েবের পরামর্শ, ‘ওঁকে দেখে শেখো। এই বয়সেই কোটিপতি ক্রিকেটার হয়ে গিয়েছে। ও এখন সেরা হওয়ার জন্য ছুটছে আর টাকা ওঁর পিছনে দৌড়চ্ছে।’ এদিন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকেও ঠুকেছেন শোয়েব।
আইপিএলের নিলাম তারপর যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরি। রাতারাতি দুনিয়াটাই বদলে গিয়েছে ১৭ বছরের কিশোরের। কিন্তু এই খ্যাতি একদিনে আসেনি। এর পিছনে কঠিন অধ্যবসায়, মানসিক জেদ এবং লক্ষ্যে স্থির থাকা উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছতে সাহায্য করেছে যশস্বীকে। ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতকে তাই এখন একডাকে সবাই বলছে, ‘যশস্বী ভবঃ’!
The post চরম দারিদ্রেও হার মানেনি, যশস্বীকে দেখে শেখার পরামর্শ শোয়েব আখতারের appeared first on Sangbad Pratidin.