অর্ণব দাস: দক্ষিণেশ্বরে পুলিশকর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি। ডাকাতির কিনারা করতে হোটেলে হানা গিয়ে দুষ্কৃতীর গুলিতে আহত হলেন একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার। শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণেশ্বর থানার আদ্যাপীঠ এলাকার এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জখম সিভিক ভলেন্টিয়ারের নাম রেজাউল হক ওরফে ইমরান। তার বাঁ পায়ে গুলি লেগেছে। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম মহম্মদ সোনু, পারভেজ আখতার এবং আখতার আলী। ধৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি কামারহাটি এলাকায়। এবিষয়ে ডিসি (সাউথ) অজয় প্রসাদ বলেন, “সেভেন এমএম পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল। গুলিটি আমাদের এক কর্মীর পায়ে লাগে। তিনজন গ্রেফতার হয়েছে। যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল সেটি এবং তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে।”
গত ৫ জানুয়ারি গভীর রাতে রহড়া থানার ডাঙাদিঘলা এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কারখানাটিতে রাতে কোন নিরাপত্তারক্ষী না থাকলেও কয়েকজন কর্মী থাকে। গভীর রাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ওই কর্মীদের একটি ঘরে বেঁধে প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা লুঠ করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার তদন্তে নেমে রহড়া থানার পুলিশ জানতে পারে কয়েকজন অভিযুক্ত আদ্যাপীঠ মন্দির সংলগ্ন ডলফিন গেস্ট হাউসে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। সেইমতো রহড়া থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের নেতৃত্বে শুক্রবার আনুমানিক বিকেলে সাড়ে চারটে নাগাদ গেস্ট হাউসে অভিযান চালায় পুলিশ।
[আরও পড়ুন: ৩০ জনের বুথ কমিটি, স্মৃতি ইরানির নির্দেশ পেয়ে বিপাকে হুগলির বিজেপি নেতৃত্ব]
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হোটেল কর্মীকে ছবি দেখিয়ে শনাক্ত করতে বললে জানাযায় দুটি রুমে রয়েছে তিনজন দুষ্কৃতী। সেই মত অভিযান চালিয়ে প্রথমে ২০৪ নম্বর রুম থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তখন সতর্ক হয়ে যায় ২০৯ নম্বর রুমে থাকা আরেক দুষ্কৃতি। সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই রুমে ছিল মহঃ সোনু। তাকে গ্রেফতার করতে এক এসআইয়ের নেতৃত্বে আরেকটি টিম সেই রুমে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। দুষ্কৃতীর ছোড়া গুলি সিভিক ভলেন্টিয়ারের রেজাউল হকের বাঁ পায়ের উরুতে লাগে। পরে সেই দুষ্কৃতিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। আহত সিভিক ভলেন্টিয়ারকে প্রথমে বেলঘরিয়া একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনার পর এলাকার হোটেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে এবিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, “পুলিশ ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ না নিলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত। তবে নিরাপত্তার জন্য হোটেলে মেটাল ডিটেক্টর থাকা উচিত ছিল। পুলিশেরও এলাকায় তল্লাশি বাড়াতে হবে এবং আচমকা তল্লাশি চালাতে হবে। একইসঙ্গে এলাকার গেস্টহাউসগুলিতে কারা রয়েছে সেই রিপোর্ট দিনে দু’বার পুলিশের কাছে জানানো উচিত।” পুলিশি অভিযানে সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে নানান মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশের মতো প্রয়োজনীয় ট্রেনিং সিভিক ভলান্টিয়ারদের থাকেনা। ফলে এই ধরনের অভিযানে তাদের নিয়ে গেলে প্রাণের ঝুঁকি থেকেই যায় বলেই অনেকে বলতে শুরু করেছেন।