সন্দীপ্তা ভঞ্জ: দেশের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস। ঠিক যে সময়ে দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে। সমাজে নারীদের অবস্থান, অধিকার নিয়ে। বাংলার আর জি কর কাণ্ডে হওয়া অপরাধের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে গোটা দেশ। আমজনতা থেকে সেলেবদের মুখে মুখে নারী স্বাধীনতার প্রশ্ন, ঠিক এমন একটা সময়েই মুক্তি পেল অমর কৌশিক পরিচালিত 'স্ত্রী ২'। কালচক্রে সিনেমার গল্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক চিত্র যেন মিলে গেল। ১৪ আগস্ট রাতে যখন শহর তিলোত্তমায় নারীরা রাত দখল করল, এক অন্য কলকাতার সাক্ষী থাকল গোটা দেশ তথা বিশ্ব, রাজপথ জুড়ে দলে দলে আট থেকে আশির মহিলারা যেভাবে সাম্যের লড়াকু বার্তা দিল, কী আশ্চর্যজনকভাবে 'স্ত্রী ২'র ক্লাইম্যাক্স সিনেও সেই ছোঁয়া। যেখানে পুরুষভূত 'সরকাটে'র (স্কন্ধকাটা) কায়েম করা নাগপাশ থেকে পুরুষতন্ত্রের শিকল ভেঙে দলে দলে চান্দেরি গাঁয়ের মহিলারা বেরিয়ে এল লাল শাড়ি পরে। পুরুষতন্ত্রের শাসন তারা মানবে না! দরজার তালা-ছিটকিনি সব ভেঙে পথে নামল 'স্ত্রী' বন্দনায়।
হরর কমেডি ঘরানার সিনেমা হলেও দর্শকদের উদ্দেশে সাম্যের বার্তা দিতে চাইল 'স্ত্রী ২'। প্রথম ছবিতে হাড়হিম করা আতঙ্ক ছড়িয়েছিল স্ত্রী। গাঁয়ের ছেলেরাই তার আক্রোশের শিকার ছিল। তবে এবার প্লটের উলাটপুরাণ। সিক্যুয়েলে আদ্যোপান্ত পুরুষতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে 'সরকাটে' খেল দেখানো শুরু করল। তার টার্গেট শিক্ষিত মহিলা এবং আধুনিকারা। এখানেও সেই 'রদ্দিমার্কা' পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণাকে বিঁধলেন পরিচালক অমর কৌশিক। মহিলারা শিক্ষিতা এবং আধুনিকা হলেই সংসারের 'নাশ'! তাই সরকাটে চরিত্রটাকে সেভাবেই তৈরি করলেন। সেই স্কন্ধকাটা ভূত নারীশক্তিকে পরাস্ত করতে তাদের অপহরণ করে নিজস্ব মন্ত্রগুহায় বন্দি করে রাখে সাদা থান পরিয়ে। গল্পের মূল মেরুদণ্ড এই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে মহিলাদের লড়াই।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'স্ত্রী' সিনেমার সিক্যুয়েল 'স্ত্রী ২'। স্ত্রীয়ের রাজত্ব শেষ হতেই চান্দেরি গাঁয়ে 'সরকাটে' তাঁর পুরুষরাজ প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। চান্দেরি পুরাণ অনুসারে সেটাই ভবিতব্য ছিল। এদিকে 'স্ত্রী'য়ের ভয় পালাতেই সেই গ্রামের পুরুষেরা কিছুতেই নিজেদের স্ত্রীয়ের কথা শোনা না। এদিকে পুরাণে এও লেখা যে, সরকাটে ভূতকে জব্দ করতে পারবে একমাত্র স্ত্রী-ই। তাই আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এদিকে চান্দেরিতে একের পর এক মহিলা অপহরণ হয়। শেষমেশ উপায় না দেখে 'বিতাড়িত' নারীশক্তির কাছেই হাত পাততে হয় ছবির পুরুষ চরিত্রদের। কীভাবে সরকাটের আতঙ্কমুক্ত হবে ভিকি ওরফে রাজকুমার রাওয়ের গ্রাম? পুরো গল্প এই পরিসরে না ভাঙাই শ্রেয়। এবার আসা যাক, সিনেমার চিত্রনাট্য এবং চরিত্রদের কথায়।
[আরও পড়ুন: ‘অশিক্ষিত’, ‘বাংলা সিনেজগতের কলঙ্ক’, ভারতবর্ষ বানান ভুল লেখায় মধুমিতাকে তুলোধনা ঋদ্ধির]
সিক্যুয়েলের চিত্রনাট্যের পরতে পরতে হাড়হিম করার রসদ তেমন নেই। গাঁথুনি আরও পোক্ত হলে মন্দ হত না। স্ত্রী বনাম সরকাটের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যে বার্তাটা ছবির মূল ইউএসপি হতে পারত, সেটাই কোথায় যেন মিলিয়ে গেল শেষপর্যন্ত। সিনেমার একাধিক সিকোয়েন্সে 'জাম্প স্কেয়ার্ডে'র দৌলতে যেভাবে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে খুব দুর্বল চিত্ত না হলে বুকে কাঁপন ধরবে না! তবে চিত্রনাট্যে প্রতিটি চরিত্রের কমিক টাইমিংয়ের প্রশংসা না করলেই নয়। এক ভীতু অথচ রোমান্টিক প্রেমিক এবং কখনও লড়াকু মনোভাব বেশ ভালোই ফুটিয়ে তুলেছেন রাজকুমার রাও। দক্ষ অভিনেতা হিসেবে তাঁর কাছে এটাই কাম্য। শ্রদ্ধা কাপুরও যথাযথ। চমৎকার পঙ্কজ ত্রিপাঠী। সাপোর্টিং চরিত্রে অপরীক্ষিত খুরানার তুলনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালো লাগল। শেষপাতের ট্যুইস্ট অক্ষয় কুমার এবং বরুণ ধাওয়ানের এন্ট্রি। তবে প্রযোজক দীনেশ বিজনের মাডক ফিল্মস 'ভেড়িয়া', 'স্ত্রী' দুই সিনেমার মিশেলে যে ব্রহ্মান্ড তৈরির চেষ্টা করল, তা মোটেই জমল না। সেই সঙ্গেই অক্ষয়ের চরিত্রের মধ্য দিয়ে নতুন সিনেমা এবং 'স্ত্রী'য়ের তৃতীয় সিক্যুয়েলের ইঙ্গিতও দিলেন পরিচালক অমর কৌশিক।