অভিরূপ দাস: কালকেও ছিল গোনা গুনতি দশটা। আজ সেখানে মেরেকেটে পাঁচটা। টবশুদ্ধ ফুল গাছ উধাও হয়ে যাচ্ছে কলকাতা পুরসভা এলাকায়। এ শুধু শহরে একটা এলাকার ঘটনা নয়। কলকাতা পুরসভার চেতলা, রাসবিহারী দেশপ্রিয় পার্ক, আলিপুর, টালিগঞ্জ, লেক রোড, সার্দান অ্যাভিনিউ, যোধপুর পার্ক জুড়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে একের পর এক টব। গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া শোভা পাচ্ছে ফ্ল্যাটের বারান্দায়। বিস্ময়ের ব্যাপার অভিজাত এলাকা থেকেই টব উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা গা সওয়া। এলাকা সৌন্দর্যায়নের জন্য বাহারি ফুল গাছ লাগান কাউন্সিলররা। প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে ব্যাগে করে তা নিয়ে চলে যাচ্ছেন অনেকেই।
কলকাতার তৃতীয় বৃহত্তম ওয়ার্ড ৯৩। কাউন্সিলর মৌসুমি দাস জানিয়েছেন, একাধিকবার বলা সত্ত্বেও অনেকে রাস্তায় ময়লা ফেলে চলে যান। তা ঠেকাতেই শুরু হয় ফুলগাছের টব বসানো। তাতে কাজও হয় দ্রুত। বন্ধ হয়ে যায় ময়লা ফেলা। কিন্তু এবার উলটো বিপদ। হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ফুল গাছের সেই টব। সাউথ সিটির মলের উলটোদিকে ময়লা ফেলা ঠেকাতে গোটা দশেক ফুল গাছের টব বসিয়েছিলেন কাউন্সিলর। কয়েক দিন যেতে না যেতেই মাথায় হাত। খালি হয়ে যাওয়ায় ফের নতুন করে টব বসাতে হয়েছে সে জায়গায়। মাস কয়েক আগে একই অবস্থা দক্ষিণাপণের পিছন দিকে যোধপুর পার্ক চিলড্রেন্স পার্ক এলাকায়।
[আরও পড়ুন: মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার আমজনতা, ২০ হাজার কোটি টাকার কর বসাতে চলেছে পাক সরকার!]
কলকাতা পুরসভার যে সমস্ত এলাকা থেকে ফুল গাছের টব উধাও হয়েছে তেমন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজের ছবি দেখতে গিয়ে বিস্মিত ওয়ার্ডের পুর আধিকারিকরা। মূলত বহুতল কিম্বা, অভিজাত এলাকার বাসিন্দারাই টব উধাও করছেন। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের বক্তব্য, ‘‘ফুটপাথে হোক বা নিজের বাড়ির বারান্দায়। গাছ থাকা ভাল। মানুষ যে সচেতন হয়ে গাছ লাগাচ্ছেন এতে আমি খুশি।’’তবে চুরি না করলে আরও খুশি হবেন মেয়র পারিষদ। বরং তিনি চান, গাছের প্রয়োজন হলে কেউ সরাসরি নিজের এলাকার কাউন্সিলরকে জানাক। মেয়র পারিষদ মারফত গাছ পৌঁছে যাবে তাঁর বাড়িতে। ফি বছর কলকাতা পুরসভা এলাকায় হয় বনসৃজন উৎসব। সেসময় বিনামূল্যে চারাগাছ দেওয়া হয়। শহরের একাধিক কাউন্সিলর জানিয়েছেন, সে সময় চারাগাছ সংগ্রহের লোক পাওয়া যায় না।
এমনটা কেন? বনসৃজন উৎসবে, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া কিম্বা ফলের গাছ দেওয়া হয়। অধুনা ছোট ছোট ফ্ল্যাটে তা লাগানোর জায়গা নেই। তাই ফুটপাথের টবে শৌখিন ফুলের গাছই পছন্দ হচ্ছে অনেকের। উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, “ফুটপাথে স্থায়ী কাঠামো করা যায় না। তাই টবেই গাছ লাগাতে হচ্ছে। তেমন গাছ পছন্দ হলে আমাদের জানান। দয়া করে টব নিয়ে চলে যাবেন না।”
[আরও পড়ুন: হিন্দি গান কেন গাইছেন? কৈলাস খেরকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হল বোতল, ভাইরাল ভিডিও]
গত একবছরে প্রায় একলক্ষ গাছ লাগিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুরসভা শহরে বনসৃজন নিয়ে নতুন নীতি ঘোষণা করেছে। ঠিক হয়েছে, অশ্বত্থ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া এবং কদমের মতো বড় গাছ শহরে লাগানো যাবে না। তার পরিবর্তে ছাতিম, জারুল, নিমের মতো গাছ লাগানো হবে। লাগানো হবে রঙ্গন জাতীয় কিছু ফুলের গাছ। পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, প্রতি বছরে বনসৃজন হলেও সঠিক ভাবে গাছ পোঁতা হয় না। তাই ঝড়ে সেগুলো সহজেই পড়ে যায়।