স্টাফ রিপোর্টার, আসানসোল: জামিন পেল না গরু পাচার মামলায় অন্যতম ধৃত এনামুল হক। তাকে আবারও ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হল। তবে আদালত থেকে বেরোনোর সময় এই প্রথম সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলল সে। আদালত থেকে বের হওয়ার সময় ক্যামেরার সামনে এনামূলের দাবি, তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে CBI। ব্যবসার সমস্ত ডকুমেন্ট থাকা সত্ত্বেও সিবিআই মিথ্যা কেস দিয়ে রেখেছে। তবে সংবাদমাধ্যম সেই সমস্ত কিছু লিখতে পারবে না, এমনকী দেখাতেও পারবে না। এমনটাই বক্তব্য গরু পাচার মামলায় অন্যতম ধৃত এনামুলের। তার আইনজীবিও আদালতের বাইরে অভিযোগ করলেন, এনামুলকে ফাঁসানোর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
বুধবার দু’পক্ষের দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পরেও জামিন পাওয়া হল না গরু পাচার মামলায় অন্যতম ধৃত এনামুল হকের। সিবিআইয়ের বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু তার জামিনের হয়ে জোর সওয়াল করেন। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে ৭৪ দিন জেলে রেখে ও রিমান্ডে নিয়ে জেরা করে তাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোনও তথ্য এখনও সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি। এখানে কোন গরু পাচার বা স্মাগলিং হয়নি। যে ২০ হাজার গরু পাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার কোন ভিত্তি নেই। ১৬ হাজার ৪১৫ টি গরু নিলাম করা হয়। যার মূল্য ১৬ কোটি ৫৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৭৪ টাকা। সরকারকে কর বাবদ দেওয়া হয় ৩ কোটি টাকা। এর থেকে আয় হয়েছে, ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা। এইসব কিছু রেকর্ড করা আছে। তিনি আরও বলেন, সিবিআই এনামুল হকের ২৯ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ করেছিল। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশে সেই সব অ্যাকাউন্টের ফরেনসিক পরীক্ষার পরে, সেগুলো চালু হয়েছে। সিবিআইয়ের অফিসাররা জেলে গিয়ে তার মুখ দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রথমসারির নেতা, নেত্রী ও বেশ কিছু মানুষের নাম বলানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে মৃত্যু তৃণমূল কর্মীর, ২ লক্ষ টাকা সাহায্য অভিষেকের]
এনামুলের আইনজীবী আরও বলেন, সিবিআই তার মক্কেলের তিন ভাগ্নেকে দুবাই থেকে ভারতে এনেছে, এই মামলায় সাক্ষী দেওয়ানোর জন্য। এছাড়াও তার মক্কেলের ফিসচুলার মতো আরও কিছু শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে তাকে যেকোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক। তার আইনজীবীরা বিভিন্ন মামলার কথা বিচারকের কাছে বলেন। তারা আবেদন করে বলেন, তাদের মক্কেল তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে ও আগামিদিনেও করবে। তাই তাকে যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক।
অন্যদিকে, এনামুল হকের জামিনের বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী কালিচরন মিশ্র পাল্টা সওয়াল করে বিচারককে বলেন, এখনই তাকে জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করব প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে। সিবিআই গত ১৪ দিনে অনেককে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করেছে। আরও জেরা করবে। সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন বিচারককে বলেন, তিনজনকে দুবাই থেকে ডাকা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ধৃত জেলে জেরা করার সময় সিবিআইয়ের অফিসারদের হুমকি দিচ্ছে। এদিন সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়াল এসে এজলাস থেকে সংবাদ মাধ্যমকে বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করা হয়। জানা গেছে, এরপর সিবিআই বেশকিছু তথ্য-প্রমাণ বিচারকের কাছে জমা দেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের কাছে সওয়াল করে বলেন, তার জামিন নাকচ করে জেলে পাঠানো হোক। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের শেষে সন্ধ্যা নাগাদ বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায় এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বিচারক বলেছেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এনামুল হককে আবার এজলাসে পেশ করতে হবে। এদিকে, বিচারকের নির্দেশের পর পুলিশ যখন এনামুল হককে জেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভ্যানে তুলছিল, তখন সে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলে, আপনারা আসল কথা লিখতে পারবেন না। আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সিবিআই মিথ্যে বলছে। আমার কাছে সব তথ্য আছে।