বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: চোরাই বাজারে চাহিদা বাড়তে ক্রমশ পাল্টাতে শুরু করেছে বন্যপ্রাণীজাত সামগ্রী পাচার কারবারের আদল। এমনই অভিযোগ বিভিন্ন মহলে। ভাল্লুকের পিত্ত ছদ্মবেশে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় ওই নকল কারবারের খবর পাওয়ার পর বনকর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। শুরু হয়েছে খোঁজ।
উত্তরবঙ্গের এক বনকর্তা জানান, কুকুরের চামড়ায় কালো ছোপ দাগ কেটে নকল চিতার চামড়া তৈরির ঘটনা জানা আছে। বেআইনি বন্যপ্রাণীজাত সামগ্রীর বাজারে অনেক কিছুই নকল। ভাল্লুকের নকল পিত্ত কারবারের খবর মিলেছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। খোঁজ চলছে। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গে ভাল্লুকের পিত্ত পাচারের কারবার প্রথম নজরে আসে ১৯৯৫ সালে। বনকর্মীরা ওই বছর নেপালে পাচারের পথে শিলিগুড়ি থেকে পিত্ত উদ্ধার করেন। এরপর ১৯৯৬ সালের মার্চ মাস থেকে ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত দিল্লির ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটির’ অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং এবং ঝালং এলাকায় ভাল্লুকের পিত্ত পাচার চক্র সক্রিয়।
[আরও পড়ুন: Kuntal Ghosh: অভিষেকের প্রশংসা কুন্তলের, কী বললেন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত যুবনেতা?]
শুধু তাই নয়। ওই অনুসন্ধানে শুয়োরের পিত্তকে ভাল্লুকের পিত্ত বলে পাচারের ঘটনাও নজরে আসে। সেটা এখনও চলছে। বন কর্তাদের অনুমান, বিদেশের চোরাই বাজারে চাহিদা বাড়লেও নজরদারির ফলে কয়েক বছরে হিমালয় সংলগ্ন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গলে ভাল্লুক শিকার বন্ধ হতে রাসায়নিক মিশিয়ে শুয়োরের পাশাপাশি অন্য পশুর পিত্ত ভাল্লুকের পিত্ত বলে পাচারের কারবার শুরু হয়ে থাকতে পারে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর অপূর্ব সেন বলেন, “নকল-আসল দু’রকমের কারবারই আছে। তবে এসব বাইরের দেশ থেকে আসছে। ওই কারবার ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি-সহ বিভিন্ন সংস্থার অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, চিন, তিব্বত, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, কোরিয়া, হংকং এবং জাপানে প্রাচীন পদ্ধতিতে ওষুধ তৈরিরর কাজে ভাল্লুকের পিত্ত ব্যবহারের চল রয়েছে। ওই চাহিদা পূরণ করতে এশিয়ার ১৭টি দেশে ভল্লুকজাত সামগ্রী পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। মূলত এশিয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, সান বিয়ার, ব্রাউন বিয়ার এবং স্লোথ বিয়ার শিকার করে পিত্ত পাচার করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। কম্বোডিয়া এবং চিনে চোরাই পিত্তের বড় বাজার রয়েছে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান ও ভিয়েতনামে বাজার তৈরি হয়েছে।
‘এশিয়ান রাইটস গ্রুপের’ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, অনেক সময় ভাল্লুকের পিত্ত রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পাউডার বানিয়ে পাচার হয়। বনকর্মীদের কয়েকজন জানান, কয়েক বছর আগেও সিকিম থেকে হিমালয়ান ব্রাউন বিয়ার এবং অসম, অরুণাচলপ্রদেশ ও মিজোরাম থেকে এশিয়াটিক ব্ল্যাক বিয়ারের পিত্ত শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি থেকে নেপাল ও ভুটান হয়ে চিনে পাচারের খবর মিলেছে। বনদপ্তরের নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় ইদানীং সেটা কমলেও ভাল্লুকের নকল পিত্ত তৈরির কারবার শুরু চলছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি শহর, ওদলাবাড়ি, বানারহাট, ঝালং, আমবাড়ি-ফালাকাটা, শিলিগুড়ি শহর, জয়গা, বীরপাড়া এলাকায় নকল পিত্ত কারবারিরা সক্রিয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ওই কারবারিরা শুয়োর সহ বিভিন্ন পশুর পিত্ত সংগ্রহ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এরপর সেগুলিতে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে ভাল্লুকের পিত্তের মতো রং এবং গন্ধ আনা হয়। সবশেষে বিশেষ মোড়কে বোতল বন্দি করে ওই পিত্ত নেপাল ও ভুটানে পাচার করা হয়।