সোম রায়: এই মাত্র পাওয়া খবর অনুযায়ী অমুক লোকসভা কেন্দ্রে এত ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন তমুক দলের প্রার্থী। কিংবা এখনও পর্যন্ত ট্রেন্ড অনুযায়ী এতটি আসনে এগিয়ে অমুক দল। ২৩ মে সকাল থেকেই বাংলা ও জাতীয় বিভিন্ন চ্যানেলে চলতে থাকবে এই জাতীয় ব্রেকিং নিউজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের দিকে এভাবেই নজর থাকবে গোটা দেশের। থুড়ি, গোটা বিশ্বের। কিন্তু ২৩ মে আসতে তো ঢের দেরি। এখনই এসব বলা হচ্ছে কেন? পাঠকের মনে আসতেই পারে এই জাতীয় প্রশ্ন। আসলে খাতায়-কলমে দিল্লির মসনদের ফয়সালা হতে এখনও দশ সপ্তাহ সময় থাকলেও, অতটা ধৈর্য যে নেই জেন-এক্সের। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন এক স্বতন্ত্র নির্বাচন। যেখানে ওপিনিয়ন পোল নয়। তাঁরা প্রায় কার্যত রায় ঘোষণাই করে ফেলছেন।
[সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার পর চূড়ান্ত কংগ্রেসের প্রথম প্রার্থীতালিকা, নাম থাকছে দীপার ]
ভোট প্রচারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের আগে সবথেকে বড় ভরসা ছিল দেওয়াল লিখন। শেষ পাঁচ-সাত বছরে যাকে পাল্লা দিচ্ছে ভারচুয়াল ওয়ার্ল্ডের দেওয়াল। একসময় যার নাম ছিল ওয়াল। বর্তমানে তা পরিচিত টাইমলাইন নামে। বিভিন্ন স্টোরি, ছবি, ভিডিও তো আছেই। পছন্দের দল ও প্রার্থীর হয়ে এই ধরনের বিভিন্ন পোস্ট দেদার প্রচার হচ্ছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায়। দিনকয়েক পরই শুরু হয়ে যাবে গুগল অ্যাড। তবে তার আগেই এক অন্য খেলায় মেতেছেন নেটিজেনরা। নিজেদের মতো করে বিভিন্ন গ্রুপ তো তৈরি হয়েইছে। এমনকী লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে চালু হয়েছে বিভিন্ন পেজও। এই ইস্যুতে যে পেজটি কলকাতায় এখনও সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে, তার নাম লোকসভা ২০১৯। গত রবিবার বিকেলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ভোটের দামামা বাজিয়ে দেওয়ার ঠিক আগের দিন জন্ম নেয় এই পেজ। এখনও প্রায় সাড়ে তিন হাজার জন সেই পেজটি ফলো করছেন। বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে শুরু হয়েছে বিভিন্ন পোল। যার প্রথমটি ছিল যাদবপুর কেন্দ্রের দুই ভোটার মিমি চক্রবর্তী ও বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে দিয়ে। নেটিজেনদের কাছে জানতে চাওয়া হয় এই দু’জনের মধ্যে কাকে বেশি পছন্দ করেন ভোটাররা।
[ভিভিপ্যাট ব্যবহার নিয়ে এবার ভোটারদের পাঠ দেবে নির্বাচন কমিশন ]
বাস্তবে কী হবে, তা জানা যাবে ২৩ মে। তবে এখনও পর্যন্ত ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে এই পোলে অংশ নেওয়া সাড়ে ছেচল্লিশ হাজার জনের মধ্যে ৫২ শতাংশই চাইছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জনকে। এরপর একে একে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রের পোল। এখনও পর্যন্ত যার সবক’টিতেই এগিয়ে বাম প্রার্থীরা। সিপিআই(এম)-সহ বাম দলগুলি বর্তমানে রক্তক্ষরণের মধ্যে চলছে। তবে নেটিজেনরা কিন্তু ভরসা রাখছেন বাম প্রার্থীদের উপর। অথচ যাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সবথেকে শক্তিশালী বলে দাবি করা হয়, সেই বিজেপি কোনও কল্কে পাচ্ছে না। যদিও বলা হচ্ছে, যেহেতু এখনও বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি, তাই তাদের কোনও প্রার্থীর নাম পোলে দেওয়া যাচ্ছে না। এই ‘নির্বাচন’-এ উল্লেখযোগ্য লিড পেয়েছেন মহম্মদ সেলিম। রায়গঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালালের সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ে এখনও অংশ নিয়েছেন সওয়া ষোলো হাজার। যাঁর ৬৬ শতাংশই চাইছেন সেলিমকে।
[‘ঝগড়া নয়,আপন করে কাছে টেনে নিন’, কর্মিসভায় বার্তা মুনমুনের]
চলতি ভোটে অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ নুসরত জাহান হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেও ৪৫-৫৫ শতাংশে পিছিয়ে সিপিআই প্রার্থী পল্লব সেনগুপ্তর কাছে। উলুবেড়িয়ায় তৃণমূল প্রার্থী সাজদা আহমেদের সঙ্গে লড়াইয়ে ৫৯-৪১ শতাংশে এগিয়ে বাম প্রার্থী মাকসুদা খাতুন। তবে এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি মার্জিনে এগিয়ে ঘাটাল কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী তপন গঙ্গোপাধ্যায়। রবিবার দুপুরে শুরু হওয়া পোলে অংশ নেওয়া পৌনে তিন হাজারজনের মধ্যে ৮০ শতাংশ এগিয়ে রেখেছেন তাঁকে। তৃণমূলের দেবের হয়ে সওয়াল করছেন মাত্র ২০ শতাংশ। একাধিপত্য বজায় রাখছেন দমদমের বাম প্রার্থী নেপালদেব ভট্টাচার্যও। প্রায় সাড়ে চার হাজার লোকের মধ্যে ৭৩ শতাংশ গলা ফাটাচ্ছেন তাঁর হয়ে। দৌড়ে অনেক পিছিয়ে সৌগত রায়। কীভাবে ইন্টারনেটের মতামতে রাশ টানা যায়, তা নিয়ে হাজার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই একটা কথা বলাই যায় যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের পোলিং বাড়বে আরও। এরপর শুরু হবে ওপিনিয়ন ও একজিট পোল। এছাড়া বিভিন্ন নিত্যনতুন প্রচার তো আছেই। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ২৩ মে যা হওয়ার হবে। তবে নিজেদের মতো করে শুধু প্রচার নয়। প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণও করতে থাকবে জেন-এক্স।
The post সোশ্যাল মিডিয়ায় বাড়ছে স্বতন্ত্র নির্বাচনের হিড়িক, এখনই ফল জানতে ব্যাকুল নেটিজেনরা appeared first on Sangbad Pratidin.