মণিশংকর চৌধুরি: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী লিখেছিলেন, অমলকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। ভারতের ‘সৌর মানব’ চেতন সিং সোলাঙ্কি বলছেন, যত পারো রোদ্দুর ব্যবহার করো, সূর্যের থেকে নির্গত শক্তি মানবসভ্যতাকে বাঁচাবে।
ইতিমধ্যেই দেশের সৌর মানব হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন চেতন। তিনি অধ্যাপক। আইআইটি-বম্বেতে অধ্যাপনা করেন। নভেম্বরের ২০২০ থেকে তিনি সোলার বাসে চেপে শুরু করেছেন এনার্জি স্বরাজ যাত্রা। পাঁচশো দিন যাত্রা করে পুদুচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। এবার তাঁর ঠিকানা কলকাতা। চেতন সিং সোলাঙ্কির এই এনার্জি স্বরাজ যাত্রা শেষ হবে ২০৩০ সালে। দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্যই আসমুদ্রহিমাচল ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে চেতন বুঝিয়েছেন, প্রতি সেকেন্ডে ৩৩ মিলিয়ন কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। এর পরিমাণ নিত্যদিন বেড়েই চলবে। একবার কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হলে তা অন্তত তিনশো বছর বায়ুমণ্ডলে থেকে যায়। তাঁর মতে, পৃথিবীর এই ভয়াল পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী।
[আরও পড়ুন: দাবানলে পুড়ছে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ, তীব্র গরমে মৃত অন্তত হাজার]
সোমবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে একটি অনুষ্ঠানে এই সুজলা সুফলা প্রকৃতিকে বাঁচানোর উপায় হিসবে তিনি জানিয়েছেন, “যতটা সম্ভব শক্তির ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। সৌরশক্তি হলেও তার অপচয় বন্ধ করতে হবে। কারণ কোনও শক্তির উৎপাদন করতে হলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রকৃতির উপরে। বিগত কয়েক দশকে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছে প্রায় দেড় ডিগ্রি ফারেনহাইট। পৃথিবী এখন জ্বরে ভুগছে। এর জন্য আমরাই দায়ী।”
পৃথিবীর এই রোগ সারবে কীভাবে? তার উপায়ও জানিয়েছেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, “আমাদের ইকোসিস্টেমে বস্তুর জোগান সীমিত। তাই ব্যবহারও সীমিত করতে হবে।” সংক্ষিপ্ত কথায়, “অ্যাভোয়েড, মিনিমাইজ এবং জেনারেট।” জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নিদেনপক্ষে যতটা কম করা যায়। সহজ কথায়, একশো শতাংশ সৌরশক্তির ব্যবহার করতে হবে। চেতন যা প্রচার করেন, ব্যবহারিক জীবনেও তা বিশ্বাস করেন। তিনি নিজের জামাকাপড় কাচেন বটে কিন্তু ইস্ত্রি করেন না। কারণ তাতে শক্তির অপচয় ঘটবে।
সৌরশক্তি নির্ভর বাসের মাধ্যমে দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ঘুরছেন চেতন। এই বাসেই রয়েছে সব কিছু। বিছানা, রান্নাঘর, বাথরুম, অফিস, বেডরুম-কী নেই তাতে! তাঁর সটান বক্তব্য, বিশ্বের উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে আনতে কোনও দেশের সরকার বাহাদুরই সাহায্য করবে না। যা করার তা করতে হবে আমাদের। ৩.২ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্যানেল রয়েছে বাসে। ৬ কিলোওয়াটের ব্যাটারি স্টোরেজ রয়েছে। আলো, কুলার, কুকস্টোভ সবই সৌরশক্তি পরিচালিত। ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই যানটিই তাঁর ঘর। এতে চেপেই পৃথিবী বাঁচানোর লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি।