বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ট্রেনে যাতায়াতের পথে পরিচিত কোনও পুরুষের সঙ্গে দেখা হওয়া কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। কারণ, পরিচিতের সঙ্গে যেকোনও সময়েই দেখা হতে পারে। কিন্তু পরিচিত পুরুষের পাশে বসে ট্রেনে নদিয়া থেকে কলকাতায় আসার ‘অপরাধে’র বিচারে বসল সালিশি সভা। মাতব্বরদের নিদান অনুযায়ী রীতিমতো একঘরে করা হল ওই মহিলাকে। মধ্যযুগীয় বর্বরতার সাক্ষী নদিয়ার (Nadia) ভীমপুর থানার নিলুয়া গ্রাম।
জানা গিয়েছে, নদিয়ার ভীমপুর থানার নিলুয়া গ্রামের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা ওই মহিলা। সন্তানও রয়েছে তাঁর। এক সন্তান বেশ অসুস্থ। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করে কোনও লাভ হয়নি। তাই সন্তানকে সুস্থ করে তোলার আশায় প্রায়শই নদিয়া থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। গত ২০ আগস্টও অসুস্থ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওই মহিলা। গন্তব্য কলকাতার সরকারি হাসপাতাল। ট্রেনে চড়ে বসেন তিনি। প্রথমে খেয়াল করেননি সহযাত্রী তাঁর পরিচিত। দেখার পর কথাবার্তা বলতে শুরু করে মহিলা। কথাবার্তা বলতে বলতেই কলকাতায় পৌঁছে যান তিনি।
[আরও পড়ুন: বকখালিতে নদীর চরে ভেসে এল বিশালাকৃতির মৃত প্রাণী, ছবি তুলতে হুড়োহুড়ি স্থানীয়দের]
এদিকে, মহিলা এবং তাঁর পরিচিত পুরুষকে পাশাপাশি ট্রেনে বসে থাকতে দেখে অনেকেরই সন্দেহ হয়। স্মার্টফোন হাতে থাকায় তড়িঘড়ি ছবিও তুলে নেয় তারা। এরপর তা এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই মহিলা পরিচিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের টানে এলাকা ছাড়ছেন বলেও গুজব রটে যায়। যদিও এলাকা ছাড়েননি মহিলা। সন্তানের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজকর্ম মিটিয়ে আবার গ্রামেই ফিরে যান তিনি।
কেন একজন পুরুষের পাশে বসে ট্রেনে যাতায়াত করলেন মহিলা, সেই প্রশ্ন করতে থাকেন মাতব্বররা। ‘অপরাধের শাস্তি’ স্থির করতে বসে সালিশি সভা। মাতব্বরদের নিদান অনুযায়ী একঘরে করে দেওয়া হয় ওই মহিলাকে। কেউ ওই মহিলার সঙ্গে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও জানায় মাতব্বররা। একঘরে হয়ে পড়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই মহিলা। জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। ভীমপুর থানার পুলিশ এরপর গ্রামে আসে। কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।