সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বছর পার। তবে করোনা (Coronavirus) কাঁটায় এখনও স্বাভাবিক হয়নি স্কুল। তাই কোভিড মোকাবিলায় জোট বাঁধলেন জঙ্গলমহলের শিক্ষকরা। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের অন্তত সাড়ে পাঁচশোজন শিক্ষক এক ছাতার তলায় এসে এই জঙ্গলমহল ব্লকের জন্য তৈরি করলেন ‘কোভিড ফান্ড’। ব্লক প্রশাসনের সাহায্যে ‘কোভিড লাইফলাইন বান্দোয়ান’ গড়ে এই অতিমারিতে শিক্ষকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানুষজনকে সেবা করতে। ৮০০১২৭৫২৪৭, ৯৭৩২২০৯৩৮১ এই দুটি নম্বরে ফোন করলেই মিলছে পরিষেবা।
শিক্ষকরা (Teacher) যে শুধু শিক্ষারই বিস্তার ঘটান তা নয়। সমাজের বন্ধু হয়ে তাঁরাও সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন। এই অতিমারি পরিস্থিতিতে বান্দোয়ানজুড়ে তাঁদের নানা কাজ তারই প্রমাণ দিচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১১টা। সুপুডি গ্রাম পঞ্চায়েতের সায়রা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অতুল চন্দ্র মাহাতো। বয়স প্রায় ৮৭। জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গে প্রবল শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন। তখনই ফোন যায় ‘বান্দোয়ান কোভিড লাইফলাইন’–এর কাছে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে রাতেই তাঁকে পুরুলিয়ায় হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ।
এইরকমই কাজে কোভিড থাবায় বান্দোয়ানকে যেন আগলে রেখেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এমন কাজে তাদের সবরকম সাহায্য করছে বান্দোয়ান ব্লক প্রশাসন। বান্দোয়ানের বিডিও কাসিফ সাবির তাঁদের ওই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্লকের শিক্ষা আধিকারিক সজল কুমার গোস্বামীকে দেখভাল করতে বলেছেন। বিডিওর কথায়, “কিছুদিন আগে বেশ কয়েকজন শিক্ষক প্রস্তাব দেন তাঁরা বান্দোয়ানের জন্য ‘কোভিড ফান্ড’ গড়ে কাজ করবেন। এই জন্য প্রশাসনকে তাঁদের পাশে থাকতে হবে। ওইরকম প্রস্তাবে আমরা তাদের উৎসাহ দিই। কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলি।”
[আরও পড়ুন: বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছেলের, মানতে না পেরে খুনের পর থানায় আত্মসমর্পণ বাবার]
সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বান্দোয়ান ব্লক প্রশাসন ওই ব্লক কার্যালয়ের ভিতরেই তাদের কাজকর্মের জন্য পরিকাঠামো গড়ে দেন। কার্যালয়ের একটি ঘরও ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের এক এক করে শিক্ষক মিলে কোভিড মোকাবিলায় হাতে হাত রাখেন। এখন সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে পাঁচশোতে গিয়ে পৌঁছেছে। তাঁদের কিছু কিছু করে আর্থিক সহায়তায় কোভিড ফান্ডে বর্তমানে অর্থ রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক কমলাকান্ত মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি মানুষ কীভাবে মারা যাচ্ছেন। এই যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না। তাই আমরা জোট বেঁধে কিছু কিছু করে অর্থ দিয়ে ‘কোভিড ফান্ড’ গড়ে এই জঙ্গলমহলের জন্য কাজ করছি। করোনা যুদ্ধে জঙ্গলমহল বান্দোয়ানকে জয়ী করতে আমরা শপথ নিয়েছি।” কীভাবে চলছে তাঁদের কাজ? অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র। সেই সঙ্গে মাস্ক, স্যানিটাইজার, সাবান। এই জঙ্গলমহলের মানুষ যখন যা চাইছেন তা বিলি করছে ‘বান্দোয়ান কোভিড লাইফলাইন’। শুধু তাই নয় কোভিড সচেতনতার প্রচারেও আমজনতাকে অভয় দিচ্ছেন তাঁরা। দিচ্ছেন করোনা যুদ্ধে পাশে থাকার বার্তা।