ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য ও রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: যখন লোকসভার স্পিকার ছিলেন, তখন দলের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে রাজি হননি। ফলস্বরূপ দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। কিন্তু, দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। একরাশ অভিমান নিয়ে চলে গেলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারকে শোকবার্তা পাঠাল সিপিএমের রাজ্য কমিটি। অথচ শোকবার্তায় উল্লেখ করা হল না, সোমনাথবাবু একসময়ে সিপিএমের সদস্য ছিলেন! সূত্রের খবর, প্রয়াত নেতার মরদেহ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও নিতে চেয়েছিল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু, রাজি হননি সোমনাথবাবুর পরিবারের লোকেরা। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, দল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে অপমান করেছে। তাই তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানানোরও কোনও অধিকার নেই সিপিএম নেতাদের।
[ সংসদীয় গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন সোমনাথ, টুইটারে শোকপ্রকাশ মোদি-মমতার]
১৯৬৮ থেকে ২০০৮। পাঁচ দশক সিপিএম পার্টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। দলের সদস্যই শুধু নয়, দশবার সাংসদও নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে যেবার শেষবার সাংসদ হন সোমনাথবাবু, সেবার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধানী ইউপিএ জোট। মনমোহন সিংয়ের সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করে বামেরা। লোকসভার প্রথম বাঙালি স্পিকার নির্বাচিত হন বোলপুরের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ। কিন্তু, তাল কাটল ২০০৮ সালে। ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল বামেরা। আস্থা ভোটে খোদ লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেও সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেয় সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সংসদীয় রীতি ভেঙে ভোট দিতে রাজি হননি। শেষপর্যন্ত দল থেকে বহিষ্কার করা হয় সোমনাথবাবুকে। দীর্ঘ রোগভোগের পর সোমবার প্রয়াত হলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। তাঁর মেয়ে অনুশীলা বসু জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্তে খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। দিল্লিতে নিজের চেম্বারে বসে চোখের জল ফেলেছিলেন। কিন্তু, বহুবার চেষ্টা করে তাঁকে দিয়ে দলের বিরুদ্ধে কিছু বলানো যায়নি। বস্তুত, নানা মহল থেকে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে দলে ফিরিয়ে নেওয়ারও দাবি উঠেছিল।
সোমবার তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নামে দেশের রাজনৈতিক মহলে। টুইট করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতারা। ব্যক্তিগত শোকপ্রকাশ করেন বঙ্গ সিপিএমের নেতারা। তবে দলের তরফে শোকবার্তা আসতে দুপুর গড়িয়ে গেল! তিনি যে দলের সদস্য ছিলেন, শোকবার্তায় সেটুকু উল্লেখ করার সৌজন্যও দেখাল না সিপিএমের রাজ্য কমিটি। তবে প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক মুলতুবি হয়ে যায়। দলীয় সূত্রে খবর, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ রাজ্য সিপিএম সদর দপ্তর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজি হননি সোমনাথবাবুর পরিবারের লোকেরা। তাঁরা বলেন, দল সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে অপমান করেছে। তাই তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানানোরও কোনও অধিকার নেই সিপিএম নেতাদের। সত্যি কথা বলতে, দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর সোমনাথবাবুর সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক রাখেননি সিপিএম নেতারা। তবে ২০১৪ সালে ফের নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা হয়েছিল। সেবার লোকসভা ভোটে সোমনা্থ চট্টোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই প্রচার করেছিল বঙ্গ সিপিএম।
[ হিন্দুত্ব থেকে সাম্যবাদের পথে, বাম রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়]
The post পরিবারের আপত্তিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ গেল না আলিমুদ্দিনে appeared first on Sangbad Pratidin.