সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: তিনদিনের ব্যবধানে ফের অনশন শুরু করলেন লাদাখের পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। যন্তর মন্তরে দিল্লি পুলিশের তরফে অনুমতি না দেওয়ায়, রাজধানীর লাদাখ ভবনে 'নজরবন্দি' অবস্থাতেই আমরণ অনশন শুরু করলেন তিনি।
লাদাখের পরিবেশ রক্ষা, রাজ্যের মর্যাদা পাওয়া ও লাদাখকে ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে ১ সেপ্টেম্বর লেহ থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন শিক্ষক, পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁরা পৌঁছন হরিয়ানা-দিল্লির সিংঘু সীমানায়। পরিকল্পনা ছিল সেখানে রাত্রিবাস করে পরদিন তাঁরা পৌঁছবেন দিল্লির 'মজনু কা টিলা' এলাকায়। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন ও রাত্রিবাস করে ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মজয়ন্তীতে তাঁর সমাধিস্থল রাজঘাটে যাত্রা শেষ করার কথা ছিল। তবে ৩০ রাতেই থ্রি ইডিয়টস ছবির র্যাঞ্চো চরিত্রের অনুপ্রেরণাকে আটক করে অমিত শাহের দিল্লি পুলিশ।
গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করেন সোনম ওয়াংচুক। তাঁর দাবি ছিল, গান্ধীজয়ন্তীতে রাজঘাটে যেতে দিতে হবে এবং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে যে কোনও একজনের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করলে তবেই বন্ধ করবেন অনশন। নিয়ম অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার বেশি কাউকে আটক করে রাখা যায় না, তাই ১ অক্টোবর রাতে কিছুক্ষণের জন্য মুক্তি দিয়ে ফের শতাধিক পদযাত্রীকে আটক করে পুলিশ। মাঝে বেআইনি আটকের প্রতিবাদ করে দিল্লি পুলিশের দ্বারস্থ হন সোনম। এই আবহে ২ অক্টোবর রাতে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। বলা হয়, দাবি মতো তিন নেতার মধ্যে একজনের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে। কবে, কখন, কোথায়, কার সঙ্গে বৈঠক হবে, দু’দিনের মধ্যে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও তা না জানানোয় নতুন করে অনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন সোনম। এর জন্য যন্তরমন্তরে অবস্থান করার আবেদন করলে দিল্লি পুলিশ তা নাকচ করে দেয়। বলা হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেখানে টানা অবস্থান করা যায় না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচি চালানো যেতে পারে। যদিও কয়েকমাস আগেই কুস্তিগীররা যন্তরমন্তরে লাগাতার বিক্ষোভ করেছিলেন। যন্তর-মন্তরের অনুমতি না পাওয়ার পর সোনমের তরফে দিল্লি পুলিশকে বলা হয়, তারাই যেন কোনও জায়গা বলে দেন, যেখানে অনশন করা যেতে পারে। জবাবে বলা হয়, গোটা দিল্লি জুড়ে পাকাপাকিভাবে ১৪৪ (বর্তমানে ১৬৩) ধারা জারি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লাদাখ ভবনেই ‘নজরবন্দি’ হয়ে থাকা সোনম অনশন শুরু করেন।
এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “দেশের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাজধানীতে নাকি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানোর কোনও জায়গা নেই। এর থেকে লজ্জার, প্রহসনের আর কী হতে পারে?” সঙ্গে জুড়লেন, “২ তারিখ আমাদের ‘মুক্তি’ দিয়ে লাদাখ ভবনে নিয়ে আসা হয়। মুখে মুক্তির কথা বললেও আদতে আমরা নজরবন্দি। কেউ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারছে না। এভাবে আমাদের দমানো যাবে না।”