আলাপন সাহা: স্টেজে তখন কন্যা সানা গঙ্গোপাধ্যায় সঞ্চালকের ভূমিকায়। উল্টোদিকে দর্শক আসনে বসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। সদ্যই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন সৌরভ-কন্যা সানা। মেয়ের অফিস ‘ইন্নোভার্ভ’-এর অনুষ্ঠানে এসে কখনও আবেগে ভেসে গেলেন। কখনও আবার তাঁর প্রত্যাবর্তনের কথা বলে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়ে গেলেন সকলকে। সৌরভ যখন ভারতীয় টিমের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ভারতীয় ক্রিকেট। এক ঝাঁক নতুন ক্রিকেটারকে নিয়ে কীভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে ভারতকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিলেন সৌরভ, সেটা আজ সবার জানা। কিন্তু সেই কাজ যে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল, সেটা এদিন স্বীকার করে নিলেন তিনি।
বলছিলেন, ‘‘একজন প্রকৃত নেতার কাজ হল সেরা ক্রিকেটারদের বেছে নিয়ে, তাদের থেকে সেরাটা বের করে নিয়ে আসা। ভারত বিশাল একটা দেশ। সেখানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রিকেটাররা আসত টিমে। তাদের জীবনধরন এক-এরকম ছিল। আমি সে’সব কখনও বদলাতে যাইনি। বরং যে যেরকম ছিল, সেভাবেই মিশতাম। আর ওরাও মাঠে নেমে সেরাটা দিত। সবচেয়ে বড় কথা হল, ওদের পাশে আপনাকে সবসময় থাকতে হবে। যাতে সবাই পর্যাপ্ত সুযোগ পায়, সেটা দেখতে হবে।’’
[আরও পড়ুন: এগিয়ে থেকেও হাতছাড়া ট্রফি, সতীর্থদের উপর খেপলেন রোনাল্ডো, মাঠেই বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গি]
একটা সময় ভারতীয় ক্রিকেটে শেষ কথা ছিলেন তিনিই। টিম লিস্টে সবার আগে তাঁর নামটা লেখা হত। কিন্তু গ্রেগ চ্যাপেল কোচ হয়ে আসার পর সৌরভের ক্রিকেটীয় জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়। একটা সময় ভারতীয় অধিনায়ক ছিলেন। সেখান থেকে রনজি খেলে ফেরার লড়াইটা করতে হয়েছিল। সৌরভ বলছিলেন, ‘‘আমি অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে ছয়-সাত বছর খুব একটা ভাবতে হয়নি। বলতে পারেন তখন দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে ভাবতে হত না। জানতাম সবার আগে আমার নামটাই লেখা হবে। কিন্তু গ্রেগ চ্যাপেলের জমানায় আমার দুনিয়া পুরোটা বদলে গেল। গ্যালারি-ভর্তি দর্শকদের সামনে খেলতাম। ওই সময় এমন জায়গায় রনজি খেলে প্রত্যাবর্তন লড়াই করেছি, যেখানে তিনটে লোকও খেলা দেখতে আসতেন না। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে রান করলাম। ২০০৮ সালে ড্রেসিংরুমে গিয়ে যখন অবসরের সিদ্ধান্তটা জানালাম, তখন টিমেরই একজন বলছিল যে জীবনের সেরা ব্যাটিংটা আমি করছি। তাহলে এখন কেন খেলা ছাড়ছি? সত্যি বলতে কী, ওই সময় জীবনের সেরা ব্যাটিং করছিলাম আমি। তখন প্রত্যেকটা ম্যাচ কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ ভেবে মাঠে নামতাম। জানতাম যে কোনও সময় টিম থেকে বাদ পড়তে পারি। অনেক সময় কী হয় বলুন তো, আপনার বস যখন প্রবল চাপে রাখে, তখনই আপনার মধ্যে থেকে সেরাটা বেরিয়ে আসে। গ্রেগ-চ্যাপেলের জমানা আমাকে আরও শক্তিশালী করেছিল।’