সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের মতোই পরিণতি হবে বিহারের (Bihar)? নীতীশ কুমারের (Nitish Kumar) জনতা দল (ইউনাইটেড) ভেঙে কি সরকার গড়বে বিজেপি? এমনই আশঙ্কায় ভুগছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তাই তড়িঘড়ি দলের বৈঠক ডেকেছেন তিনি। এমনকী, বিজেপিকে ছেড়ে আরজেডি (RJD) এবং কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সরকার চালাতে পারেন নীতীশ। কিন্তু কী এমন ঘটল যার জন্য সরকার গড়ার দেড় বছরের মধ্যে বিজেপি-জেডিইউর মধুচন্দ্রিমায় ইতি পড়তে চলেছে?
রাজনৈতিক মহল বলছে, এই দূরত্বের সূত্রপাত হয়েছিল ভোট মেটার পরপরই। প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি বিধায়ক সুশীল মোদি ছিলেন নীতীশ ঘনিষ্ঠ। কিন্তু এবারের সরকার গঠন হতেই তাঁকে সরিয়ে দেয় পদ্ম শিবির (BJP)। বদলে ওই পদে বসানো হয় তারকিশোর প্রসাদ এবং রেণু দেবীকে। এমনকী, সুশীলকে বিহারের বাইরে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা মোটেও ভালভাবে নেয়নি জেডিইউ। কারণ, একের পর এক অমিত শাহ ঘনিষ্ঠদের রাজ্যের মন্ত্রী করেছিল বিজেপি। যা দেখে জেডিইউ নেতৃত্বের ধারণা হয়, বিহারের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইছে পদ্মশিবির। রাজ্যের সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে দিল্লি থেকে। আবার বিহার বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, সরকার পরিচালনায় দলের মন্ত্রীদের পাত্তা দেন না নীতীশ। সরকারে আরও বেশি করে কর্তৃত্ব চাইছিল গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন: বিহারের রাজনৈতিক ডামাডোলে নয়া মোড়, সোনিয়াকে ফোন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের]
অন্যদিকে, বিহার বিধানসভার স্পিকার বিজয়কুমার সিনহার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। একাধিকবার প্রকাশ্যেই স্পিকারের বিরুদ্ধে মেজাজ হারিয়েছেন নীতীশ। অভিযোগ করেছেন, সংবিধান না মেনেই কাজ করছেন স্পিকার তথা বিজেপি বিধায়ক। আবার প্রকাশ্যে সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করেছেন স্পিকার বিজয়কুমার। এই স্পিকার-মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে বিহার সরকারেও।
আবার নীতীশ কুমারকে না জানিয়েই জেডিইউ (JDU) সাংসদকে আরসিপি সিংকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব দিয়েছিল মোদি সরকার। যা মোটেও ভালভাবে নেয়নি বিহারের জেডিইউ নেতৃত্ব। এর জবাব হিসেবে এবার বিজেপি ঘনিষ্ঠ আরসিপি সিংকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে পাঠায়নি নীতীশের দল। ফলে মন্ত্রিত্বও ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে নীতীশকে তুলোধোনা করেছিলেন আরসিপি সিং। তাঁর কটাক্ষ, “ঈর্ষার কোনও ওষুধ নেয়নি। আগামী সাতজন্মে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না নীতীশ।”
[আরও পড়ুন: ক্যানসার সারানোর নামে আর্থিক প্রতারণা! স্বঘোষিত ‘বাবা’-র বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস উত্তরপ্রদেশ পুলিশের]
তবে জেডিইউ-বিজেপির মধ্যে ফাটল আরও চওড়া হয় জাতপাতের ভিত্তিতে জনগণনা ঘিরে। কেন্দ্র যেখানে জনগণনায় জাতপাতের উল্লেখ রাখতে চায় না, সেখানে বিহার সরকার আলাদা আলাদা জাতের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। নীতীশের এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করেছিল বিজেপির দিল্লি নেতৃত্ব। তারপরেও নিজের অবস্থানে অনড় জেডিইউ নেতা। এমন পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের ঘটে গিয়েছে অপারেশেন লোটাস। ফলে নিজের গদি নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন নীতীশ। বিজেপির কলকাঠি নাড়ার আগেই বিরোধীদের নিয়ে সরকার গড়ার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করতে নেমে পড়েছেন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নীতীশ কুমার।