সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেকব জুমার (Jacob Zuma) গ্রেপ্তারিতে অগ্নিগর্ভ দক্ষিণ আফ্রিকা। কার্যত ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ছবি স্পষ্ট করে দেশটিতে চলছে অবাধ লুটতরাজ। শপিংমল, দোকান-বাজারে আগুন জ্বালিয়ে সমস্ত পণ্য নিয়ে পালাচ্ছে দাঙ্গাবাজের দল। ফলে নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে মিলিশিয়া বা সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করছেন দেশটির শ্বেতাঙ্গ নাগরিকরা।
[আরও পড়ুন: সাইপ্রাসে নাবিকদের ‘ফুর্তির খেসারত’, করোনার মারে বিপাকে ব্রিটিশ নৌসেনা]
গত সপ্তাহ থেকেই হিংসাত্মক ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত সোমবার রাতে সোয়েটো শহরের একটি শপিং সেন্টারে লুটের ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় কমপক্ষে ১০ জনের। ওই শহর জুড়ে কম করে ২০০টি শপিংমল লুটপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। ভাঙা হয় বহু এটিএম। তাণ্ডবের শিকার হয়েছে একাধিক রেস্তরাঁ। লুটপাট চলে মদ এবং জামাকাপড়ের দোকানেও। এই হিংসায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ১২ জন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হিংসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কমপক্ষে ১২৩৪ জনকে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে নিজেদের সম্পত্তি রক্ষায় মিলিশিয়া বা সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করছেন দেশটির শ্বেতাঙ্গ নাগরিকরা। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা নামিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। নৈরাজ্য রুখতে দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন তিনি। তবে দুর্নীতি দমনের নামে জুমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা করছেন রামাফোসা বলেও অভিযোগ উঠছে। সব মিলিয়ে দেশটির পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুমা। বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলনে দেশটির বর্তমান শাসকদল ‘আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস’-এর অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি। ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল কৃষ্ণাঙ্গদের ও দলের তৃণমূল স্তরে জুমার জনপ্রিয়তা বিস্তর। তবে শাসনকালে দেশের সম্পদ নয়ছয় ও দুর্নীতির বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ‘গুপ্তাগেট’ কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে তাঁর নাম। অভিযোগ, ব্যক্তিগত স্বার্থে ভারতীয় বংশোদ্ভুত গুপ্তা পরিবারের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দিয়েছেন জুমা। সেই সূত্রে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রশাসন।আদালত তাঁকে সশরীরে হাজিরা দিতে নির্দেশ দিলেও তিনি তা করেননি। তারপরই আদালতের অবমাননায় গত শুক্রবার ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাঁকে। যার পরেই দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই হিংসা।তবে সবাই যে জুমার সমর্থনে লুটপাট চালাচ্ছেন তা নয়। অনেকেই আর্থিক দুরবস্থার হাত থেকে রেহাই পেতে সুযোগ বুঝে দোকান থেকে পণ্য চুরি করছেন।