সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিঃসঙ্গতায় মৃত্যু হচ্ছে ওদের। দেহ পচে গন্ধ বেরোলে খবর পাচ্ছে সমাজ। অনেক ক্ষেত্রেই আত্মীয়রা নয়, মৃতের শেষকৃত্য করছে প্রশাসন। যেহেতু কেউ নেই! এই নিকটজন না থাকাই এমন মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ, বলছেন চিকিৎসকরা। দেশে হাজার হাজার মানুষের ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’ নিয়ে উদ্বিগ্ন দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় ভাষায় ‘কোডোকসা’ বা ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’ বছর বছর বেড়ে চলেছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার এতটাই চিন্তিত যে তা ঠেকাতে আইন এনেছে সরকার।
ইঁদুর দৌড়ের পৃথিবীতে একান্নবর্তী ভাবনা অলিক। অণুতর হচ্ছে পরিবার। একাধিক কারণে ভিন্নরূপে ফিরে আসছে জঁ পল সাত্রের মহাবচন “দ্য আদার ইজ হেল।” নতুন প্রজন্মের একটি অংশ স্বার্থপরের মতো অস্বীকার করছে আত্মীয়দের। বয়স হলে সেই তাঁরাও নিঃসঙ্গ মৃত্যুর কবলে পড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসন জানাচ্ছে, হয় বিষাদগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করছেন অথবা অসুস্থ হয়ে অবহেলায় মৃত্যু হচ্ছে বহু মানুষের। কারণ কেউ দেখার নেই ওদের। মরা পচলে খবর পাচ্ছেন প্রতিবেশী। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’ হয়েছে ২,৪১২ জনের। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩,৩৭৮।
[আরও পড়ুন: ‘আপনার নেতৃত্বে প্রযুক্তিতে উন্নতি করেছে ভারত’, মোদিকে বললেন গুগল CEO]
প্রশাসনের বক্তব্য, কোভিড মহামারি আমলে সমান্তরাল মহামারী হয়ে উঠেছে ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’। যে কারণে মৃত্যু বাড়ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের সেগুলি হল সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য এবং জনসংখ্যাগত সংকট। আধুনিক যাপন ক্রমশ দামী হয়ে ওঠায় সন্তান নিচ্ছেন না অনেকেই। কেউ কেউ আবার ভাগদৌড়ের জীবনে আরও আরও বেশি আয়ের খোঁজে এত ব্যস্ত যে বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদু-ঠাকুমাকে সময় দিতে পারছেন না। জানা গিয়েছে, ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’ হচ্ছে যাঁদের, তাঁদের ৬০ শতাংশের বয়স পঞ্চাশ বা ষাটের কোটায়। যদিও চল্লিশ, এমনকী সত্তরের কোটায় পৌঁছানো মানুষও খুনি নিঃসঙ্গতার পাল্লায় পড়ে মারা যাচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: তিন মাসে কোভিড আক্রান্ত হবেন চিনের ৬০ শতাংশ মানুষ! চাঞ্চল্যকর দাবি মহামারী বিশেষজ্ঞের
পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে ওঠায় ‘লোনলি ডেথ প্রিভেনশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ২০২১’ এনেছে দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসন। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নিঃসঙ্গ মৃত্যু ঠেকাতে একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। এই বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে দেখছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। যদিও জীবন যাপনে পরিবর্তন না আসলে, বিলাসিতা থেকে না সরলে ভবিতব্য বদলাবে না মানুষের। হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন সমাজবিদ ও মনস্তত্ববিদরা।