স্পেন: ৩ (মোরাতা, ফাবিয়ান, কার্ভাহাল)
ক্রোয়েশিয়া: ০
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউরোর গ্রুপ অফ ডেথ। গত ইউরোর চ্যাম্পিয়ন ইটালি, নেশনস কাপ জয়ী স্পেন আর বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে বাদ যেতে পারে যে কোনও দল। কিন্তু এদিনের ম্যাচের পর ছবিটা বদলে গেল বললে ভুল বলা হয় না। অন্তত স্পেন যে ফুটবলটা খেলল, তাতে গ্রুপ বি থেকে 'মৃত্যুঞ্জয়ী' হয়ে উত্থান ঘটল তাদের। ক্রোয়েশিয়াকে অনায়াসে উড়িয়ে দিয়ে ইউরো অভিযান শুরু করলেন মোরাতারা। ম্যাচের ফলাফল তাঁদের পক্ষে ৩-০।
গতবারের ইউরো কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, তার পর নেশনস লিগের ফাইনাল। দুবারই স্পেনের কাছে থমকে গিয়েছে ক্রোয়েশিয়ার ট্রফিজয়ের স্বপ্ন। ক্লাব ফুটবলে জিতেছেন প্রায় সব ট্রফি, ঝুলিতে রয়েছে ব্যালন ডি’ওরও। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে লুকা মদ্রিচকে বারবার ফিরতে হয়েছে খুব কাছ থেকে। এদিন সমস্ত হিসেব বুঝে নেওয়ার সুযোগ ছিল ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়কের কাছে। আগের হারের মধুর প্রতিশোধ আর সেই সঙ্গে ইউরো জয়ের প্রবল দাবিদার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরা। কিন্তু যৌবনের শক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হল তাঁর লড়াই।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের মাঝেই দেশে ফিরছেন শুভমান-আবেশ, কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা!]
স্পেনের ফুটবল বললেই স্বাভাবিকভাবে মনে পড়বে তিকিতাকার কথা। সেই প্রজন্মের সবাই এখন অবসরের বৃত্তে। আজও প্রচুর পাস খেলেন পেদ্রিরা। কিন্তু অতীতের মতো সৃষ্টিশীল আর কার্যকরী কি? সেই প্রশ্নটা বারবার উঠে এসেছে সামনে। দাভিদ ভিয়া, তোরেসদের পর স্ট্রাইকার হিসেবে একমাত্র আলভারো মোরাতা ছাড়া কেউ নেই। পিকে, র্যামোসের বিকল্প আজও তৈরি হয়নি। তবে একঝাঁক তরুণ তুর্কি প্রতিবারই উঠে আসেন স্পেনের বিভিন্ন ক্লাবের আকাদেমি থেকে। তাঁরা কি সোনালী প্রজন্মের উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারবেন? স্পেনের জন্য এই তুলনাটাই অতিরিক্ত চাপ হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু কোথায় কি! এদিন সম্পূর্ণ অন্য ঘরানার ফুটবল খেলল স্পেন।
শুরুতে তাও একটু ছন্দে ছিলেন মদ্রিচরা। তার পরই ঝড়ের বেগে ম্যাচ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন পেদ্রিরা। দুই উইং দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে বারবার বিপাকে ফেলছিলেন ইয়ামাল, নিকোরা। এদিন ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ড গড়লেন ইয়ামাল। লুকা মদ্রিচের উপস্থিতি সত্ত্বেও মাঝমাঠের দখল ছিল ফাবিয়ান রুইজদের হাতে। আর তাতেই বাজিমাত। এই স্পেনকে আবিষ্কার করা গেল নতুনভাবে। পাসের ফুলঝুরি নয়, বরং অনেক বেশি ডিরেক্ট ফুটবল। ২৯ মিনিটে প্রথম গোলটা এল সেভাবেই। মাঝমাঠ থেকে ফাবিয়ান রুইজের ডিফেন্স চেড়া পাস পৌঁছে যায় মোরাতার পায়ে। গোল করতে ভুল করেননি স্পেনের অধিনায়ক। তিন মিনিট পরে ফের ধাক্কা। এবার পেদ্রির অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে গেলেন খোদ রুইজ।
গোলের সুযোগ অবশ্য ক্রোয়েশিয়াও পেয়েছিল। কিন্তু কখনও গোলকিপার উনাই সিমনের বিশ্বস্ত হাত, কখনও বারপোস্ট হতাশ করল তাদের। বরং হাফটাইমের একটু আগেই ৩-০ করে ফেলল স্পেন। ইয়ামালের ক্রসে পা ছুঁইয়ে গোলের মুখ খুলে ফেললেন দানি কার্ভাহাল। প্রথমার্ধেই ম্যাচ পকেটে পুরে ফেলল লা রোখারা। দ্বিতীয়ার্ধেও ছবিটা খুব একটা বদলায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু আক্রমণ বজায় রেখেছিলেন ক্রামারিচরা। কিন্তু গোলের দরজা খোলেনি। প্রথমার্ধে ডিফেন্সের ভুলভ্রান্তি সামলে কুকুরেয়ারা স্পেনের গোলের মুখ বন্ধ করে দিলেন। অবশ্য পরে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো একটা পেনাল্টি পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সেখান থেকেও গোল করতে ব্যর্থ ক্রোটরা।
বল পজিশন হোক কিংবা পাসিং সবেতেই এগিয়ে ছিলেন মদ্রিচরা। কিন্তু কাজের কাজটি করতে পারলেন না। গ্রুপ অফ ডেথ থেকে বিদায় আশংকাও এখন দুশ্চিন্তায় রাখবে ক্রোয়েশিয়াকে।