অভিরূপ দাস: আড়াই একর জমির ওপর তৈরি ১৬২ ফুটের দেবালয়। এঁটে গিয়েছে বারো হাতের শাড়িতে! পরলেই হল। যতবার হাওয়ায় আঁচল উড়বে, দেখা যাবে রামমন্দির (Ram Mandir)। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ। শাড়ির দোকান ছেয়েছে অযোধ্যা শাড়িতে। রাত পোহালেই অযোধ্যায় মেগা ইভেন্ট। ‘‘সবাই তো আর যেতে পারবে না। যাঁরা টিভিতে দেখবে এই শাড়ি পরেই থ্রিল নেবে’’, মুচকি হেসে বললেন গড়িয়াহাটের শাড়ি ব্যবসায়ী।
শ্যামবাজার, হাতিবাগান, বড়বাজার, গড়িয়াহাট, নিউমার্কেটে এখন গরম কেকের মতো বিকোচ্ছে অযোধ্যা শাড়ি। নিখাদ স্যাটিন কাপড়ের তৈরি শাড়ি কিনতে আগ্রহ কম নেই। দাম তো মোটামুটি মধ্যবিত্তর নাগালের মধ্যে। এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করলেই মালিক হওয়া যাবে অযোধ্যা শাড়ির। কোথাও আবার দামেও রয়েছে চমক! যেমন? নিউমার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী তরুণ ইসানি জানিয়েছেন, আমার দোকানে শাড়ির দাম ১০২২ টাকা। এই দাম রেখেছি রামমন্দির উদ্বোধনের তারিখকে মাথায় রেখেই। তরুণের যুক্তি, ‘‘২২ জানুয়ারি উদ্বোধন, খাতায় তারিখ লিখলে তা দাঁড়ায় ২২/০/১। এটাকে উলটে দিয়েই শাড়ির দাম ১০২২ টাকা।’’
[আরও পড়ুন: ফ্যানের নামে বিকৃতি! রশ্মিকার ডিপফেক ভিডিওর মূলচক্রীর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস]
একাধিক দোকানে আবার শাড়ির সঙ্গে রয়েছে উপহারও। নিউমার্কেটের মনসা শাড়ি ক্রিয়েশনে শাড়ি কিনলে মিলছে মুফতে একটা প্রদীপ। নবীন ঈশানি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ জানুয়ারি দেশবাসীকে দীপাবলি পালন করতে বলেছেন। ক্রেতাদের বলেছি, ২২ জানুয়ারি ওই প্রদীপটা জ্বালাবেন। রামমন্দির নিয়ে যতই রাজনীতি হোক, শাড়ি ব্যবসায়ীরা একমত, সেলিব্রেট করার জন্য নতুন উৎসব পেয়ে গিয়েছে আমজনতা। বড়বাজারের শাড়ি ব্যবসায়ী দীপক শর্মা জানিয়েছেন, দুর্গাপুজো, পয়লা বৈশাখে যেমন আলাদা করে শাড়ি কেনার ধুম পড়ে। তেমনই রামমন্দির উদ্বোধনের দিনেও নতুন শাড়ির খোঁজ করছিলেন শাড়ি-প্রেমীরা। তাদের জন্যই নতুন অযোধ্যা শাড়ি। এই শাড়ির সঙ্গে রয়েছে মানানসই গেরুয়া ব্লাউজ পিস।
কী রয়েছে শাড়িতে? আড়াই একর জমির ওপর তৈরি ১৬২ ফুটের গোটা মন্দিরটাই রয়েছে বারো হাতের এই শাড়িগুলোয়। কোথাও আঁচলে লেখা জয় শ্রীরাম, কোথাও বা রামের অস্ত্র তীর ধনুক। টকটকে কমলা, স্মিত গেরুয়া। অযোধ্যা শাড়ি কিনতে ভিড়ও কম নয়। গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার, নিউমার্কেটে ইতিউতি ক্রেতাদের উঁকিঝুঁকি। ২২ জানুয়ারি সবাই তো আর অযোধ্যা যেতে পারছেন না। তবে উৎসবের অঙ্গ হতে এই শাড়ি বগলদাবা করেছেন অনেকেই।
বেহালার বাসিন্দা পিয়ালী গঙ্গোপাধ্যায় ঘুরঘুর করছিলেন নিউমার্কেটে। তাঁর কথায়, কেনা থাকল। ইচ্ছে আছে এই বছরই একবার অযোধ্যা যাওয়ার। তখন ওই শাড়িটাই পরবো। ফ্যাশন দুনিয়ার নতুন ট্রেন্ড তাই এখন অযোধ্যা শাড়ি। সেলিব্রিটিদের মধ্যেও তা নিয়ে উচ্ছ্বাস কম নেই। অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্রর কথায়, “আমার কাছে রামমন্দির মানে ঈশ্বরের পবিত্র স্থান। তাতে কোনও রাজনীতি নেই। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী। দুর্গাপুজো এলে যেমন উৎসাহ, উদ্দীপনা হয়। তেমন রামমন্দিরের জন্যও হচ্ছে। ইচ্ছে রইল অযোধ্যা শাড়ি কেনার।” অন্যদিকে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র এই শাড়ি কিনতে খুব একটা আগ্রহী নন। তাঁর কথায়, “আলাদা করে অযোধ্যা শাড়ি কেনার ইচ্ছে নেই।”