অর্ণব দাস, বারাসত: এও এক ফিনিক্স পাখির কাহিনি! এভাবেও ফিরে আসা যায়! মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে গিয়ে জীবনে নেমে এসেছিল বিরাট বিপর্যয়। পড়ে গিয়ে কোমর থেকে দু'পায়ের শক্তি হারিয়েছিলেন। এরপর আবার চিকিৎসায় একের পর এক ভুল। তাতে নষ্ট হয় প্রায় ৮ বছর সময়। জীবনের প্রতি চরম হতাশায় তিনবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিল যুবক। তাতেও ব্যর্থতা। শেষে জীবনযুদ্ধকেই আলিঙ্গন করে নিলেন গোবরডাঙার কুশল মণ্ডল। ট্রাই সাইকেলকে সঙ্গী করে এখন নিজের 'পায়ে' দাঁড়িয়েছেন তিনি। অনলাইন ডেলিভারি সংস্থার কর্মী কুশল। তিন চাকার সাইকেল নিয়েও কিন্তু গতির লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই তিনি। আর তাঁর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।

২০১৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন কুশল মণ্ডল। তারপরই ফুটবল খেলতে গিয়ে পড়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত প্লাস্টার হয়। মেডিক্যাল রিপোর্টে টিবি ছিল না, কিন্তু যক্ষ্মা রোগের ওষুধ খাওয়ানো হয়ে তাঁকে। এই ভুল চিকিৎসায় ক্ষমতা শরীর খারাপ হতে থাকে তাঁর। শেষে এক প্রকার প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে যান। ৬ মাস পর ঠাকুরনগরের এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের চিকিৎসায় সে ফের কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এভাবে পেরিয়ে যায় ২০১৮ সাল। তারপর এসএসকেএমে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানা যায়, এঙ্কাইলোসিস স্পন্ডেলাইসিসে আক্রান্ত কুশল। কখনও আর জি কর, কখনও এসএসকেএমে দৌড়ে প্রায় দু'বছর চিকিৎসার পর ঠিক হয়, আর জি করে তাঁর প্রথমে কোমর ও হাঁটু রিপ্লেসমেন্ট হবে। কিন্তু অস্ত্রোপচারে নির্ধারিত দিনের আগেই করোনাকালের লকডাউন শুরু হয়। ফলে অপারেশন না হয়ে হাসপাতালেই গোটা করোনার সময়টা কাটে তাঁর।
গতির দৌড়ে ট্রাইসাইকেলই সঙ্গী অনলাইন ডেলিভারি বয় কুশলের। নিজস্ব ছবি।
প্রথম ধাপের লকডাউনের পর তার হাঁটুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তবে পরে জানা যায়, তা সফল হয়নি। তাই দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারে করা হয়। এইভাবে হাসপাতালেই কুশলের অতিবাহিত হয় প্রায় দেড় বছর। বাধ্য হয়ে তাঁকে ছুটি নিতে হয়। শেষে 'স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে'র সহায়তায় কলকাতার নামী সরকারি হাসপাতালে তাঁর ডান হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়। দীর্ঘ বছরের এই চিকিৎসার ধকল সামলে উঠলেও বাঁ হাঁটু প্রতিস্থাপনের সাহস দেখাতে পারেননি কুশল। ক্রাচে ভর দিয়েই শুরু করেন জীবনযুদ্ধ। এত লড়াইয়ের মাঝেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। নিজের 'পায়ে' দাঁড়াতে এখন তিনচাকার সাইকেল চড়ে অনলাইন ডেলিভারি সংস্থায় কাজ করছেন। পরিবারে তাঁর বাবা, মা ভাই রয়েছে। বাবা ওষুধের দোকানের কাজ করেন।
কুশল বলেছেন, "একসময় বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু সফল হইনি। তাই লড়াই করেই বেঁচে থাকার পথটাই বেছে নিয়েছি। স্বাবলম্বী হতে, নিজের ওষুধের খরচ চালাতে ডেলিভারি সংস্থার কাজে ঢুকেছি। ইচ্ছে আছে, ট্রাই সাইকেল করেই একদিন গোটা দেশ ঘুরে দেখায়।"