সঞ্জয় সেন: কলিঙ্গ সুপার কাপ ডার্বি হওয়ার পর আইএসএলের প্রথম ডার্বির (East Bengal vs Mohunbagan) সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আলোচনায় পরিবেশ হয়ে গিয়েছে সরগরম। সাধারণত দেখা গিয়েছে, কোচ বদল হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দলের খেলায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেটা আমাদের দেশেই হোক বা বিদেশে। বিদেশের কথা যদি ধরি, তবে সদ্যই সিরি এ-তে রোমা হোসে মোরিনহোকে সরিয়ে ড্যানিয়েল ডি রোসিকে কোচ করার পর তারা টানা দু’টো ম্যাচ জিতেছে। আমাদের দেশেও জামশেদপুর এফসি সম্প্রতি স্কট কুপারকে সরিয়ে খালিদ জামিলকে কোচ করার পর ওদের খেলায় পরিবর্তন হয়েছে। যদিও এই পরিবর্তনের কারণ ঠিক কী, সেটা বলা মুশকিল।
এবার বলি এই তথ্যগুলো কেন উপস্থাপন করলাম। শনিবার ভারতীয় ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হবে। আর এই ম্যাচটা দিয়েই মোহনবাগানের টিডি থেকে কোচ হয়ে টেকনিক্যাল এরিয়ায় বসতে চলেছেন আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। কোচ বদলের প্রভাবে মোহনবাগানের খেলায় কোনও ইতিবাচক বদল হয় কি না, সেটা অবশ্যই কৌতূহলের। হাবাসের সুবিধা, জাতীয় দলের ফুটবলাররা ফিরছে। ফলে মোহনবাগান অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে নামবে। একইসঙ্গে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বিদেশিদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স। দেখার বিষয়, কোন চারজন বিদেশিকে নিয়ে হাবাস ম্যাচ শুরু করেন। এখনও জানি না, আনোয়ার আলি খেলার মতো জায়গায় আছে কি না। সাহাল আবদুল সামাদ হয়তো সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে নিজেকে ফিরে পেতে তার সময় লাগবে। অনিরুদ্ধ থাপা আর শুভাশিস বসুর যোগদান দলের শক্তি বাড়াবে। যেমন বাড়াবে মনবীর-লিস্টন কোলাসোর যোগদান। হাবাস তাঁর ক্ষুরধার মস্তিস্ক দিয়ে পরিস্থিতি অনুযায়ী কৌশলগত পরিবর্তন যে করবেনই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মিইয়ে পড়া বিদেশিদের যদি তিনি চাগিয়ে তুলতে পারেন, তবে পূর্ণশক্তির মোহনবাগানের পুরনো ভেল্কি না দেখানোর কোনও কারণ নেই। আমার মনে হয়, এই দলে মনবীর সিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে।
[আরও পড়ুন: বান্দোয়ানের বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষীর রহস্যমৃত্যু, এমএলএ হস্টেলে উদ্ধার দেহ]
অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলের প্রসঙ্গে প্রথমেই বলতে হবে কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের কথা। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সুদূরপ্রসারী ভাবনা নিয়ে তিনি এই দলটিকে তৈরি করতে পেরেছেন। নিজের এবং ফুটবলারদের উপর ভরসা রেখে ইতিমধ্যেই দু’টো সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলার স্বাদ পেয়েছেন। এবং সুপার কাপ জিতে দলের সমর্থকদের ভরসা দেওয়ার কাজটাও করেছেন। সেই ভরসার জোরে সদস্য-সমর্থকরা এই ডার্বিতে ভালো কিছু আশা করতেই পারেন। মাঝমাঠে সৌভিক চক্রবর্তীর না থাকাটা অবশ্যই বড় ধাক্কা। সুপার কাপ ডার্বিতে হুগো বুমোস আর ফাইনালে আহমেদ জাহুকে সৌভিক কৃতিত্বের সঙ্গে ভোঁতা করে দিতে পেরেছিল। এই ডার্বিতে কুয়াদ্রাত সেই কাজটা কাকে দিয়ে করান, সেটাই দেখার। কুয়াদ্রাতের হাতে মাত্র চার বিদেশি আছে। তবে কাকে কোথায় ব্যবহার করবেন সেটা ইস্টবেঙ্গল কোচের নিশ্চিতভাবেই অজানা নয়। সুবিধা হল, কঠিন পরিস্থিতিতে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তিনি ফুটবলারদের সেরাটা বের করে আনতে জানেন। সেই অভিজ্ঞতায় ভর করেই ডার্বির নীলনকশা তৈরি করবেন তিনি। নন্দকুমার, ক্লেটন সিলভা নাকি সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ডার্বির হিরো হবে সেটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
আইএসএলের প্রথম দিকে ইস্টবেঙ্গলের বিদেশিরা কিছুটা নিষ্প্রভ ছিল। তারা এখন ফর্মে। আর একটা দলের ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রক্ষণ। সেটা জমাট করার কাজটা কুয়াদ্রাত সাফল্যের সঙ্গে করেছেন। হিজাজি মাহের দুরন্ত খেলছে। সঙ্গে আমি বলতে চাই পার্দো লুকাসের কথাও। শুরুর দিকে নড়বড়ে থাকলেও সময়ের সঙ্গে দলকে ভরসা জুগিয়েছে। সেই ভরসার উপর ভিত্তি করেই কুয়াদ্রাত ডার্বির পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। ফুটবলের সমর্থক হিসাবে শনিবার একটা উপভোগ্য ম্যাচ হোক, সেটাই চাইছি।