অর্পণ দাস: সবুজ-মেরুন জার্সিতে রক্তের দাগ! খেলার মাঠের সঙ্গে একেবারেই যায় না ছবিটা। কিন্তু সেটা নিয়েই জামশেদপুর থেকে ফিরলেন মোহনবাগান সমর্থক রিপন। আর শুধু তিনি একা তো নন, সৌরভ সরকার, শিলাজিৎ দাসরাও একই পরিস্থিতির শিকার। গত কয়েক বছর ধরে জামশেদপুর এফসি'র বিরুদ্ধে খেলা দেখতে যাওয়াই এখন আতঙ্ক হয়ে উঠছে মোহনবাগান সমর্থকদের জন্য। কিন্তু পুলিশের লাঠির আঘাতে যে রক্ত বেরোল, তার 'মূল্য' কী চোকানো হবে না? রিপনের দৃঢ়বিশ্বাস, হবে। সেটা মাঠে। জবাব দেবেন মোহনবাগানের ফুটবলাররা। ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে জামশেদপুরকে দুরমুশ করলেই 'যোগ্য জবাব' দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন বনগাঁর রিপন মণ্ডল। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে সেই কথা জানালেন তিনি।

আইএসএল সেমিফাইনালের প্রথম পর্ব দেখতে জামশেদপুরে হাজির হয়েছিলেন মোহনবাগানের অনেক সভ্য-সমর্থক। মনের ভিতরে একটা চোরা আতঙ্কও ছিল। গত কয়েক বছরে বাংলার ফুটবল সমর্থকরা জামশেদপুরে গেলেই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। সেই জন্য সকলে জোটবদ্ধ থাকার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু পুলিশের আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি কি আগে হয়েছে? ঘটনার সূত্রপাত জামশেদপুরের জাভি সিভেরিও গোল করার পর। সেই সময় সাউথ ওয়েস্ট অ্যাওয়ে গ্যালারিতে মোহনবাগান সমর্থকদের আনা সবুজ-মেরুন পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে কিছু জামশেদপুর এফসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
স্বাভাবিকভাবেই বাধা দিতে যান মোহনবাগান সমর্থকরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তাতে মাথা ফেটে যায় বছর পঁচিশের রিপনের। এছাড়া গুরুতর আহত হন সৌরভ সরকার, শিলাজিৎ দাসরা। পরে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতা নিয়ে রিপন জানালেন, "জামশেদপুর সমর্থকরা যখন পতাকা ছিঁড়ছিল, তখন পুলিশ ওদের আটকায়নি। উলটে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। আমার মাথায় সরাসরি মারে। আমি ওখানে পড়ে গেলেও লাঠিচার্জ থামায়নি। তারপর যখন দেখে যে আমার মাথা থেকে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে, তখন টানতে টানতে নীচে নিয়ে যায়। পরে আমাকে হাসপাতালের ডাক্তার বলেন, আর এক ইঞ্চি উপরে লাগলে প্রাণ যেতে পারত।"
তবে এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন রিপন। বহু কষ্টে তাঁরা কলকাতায় ফিরেছেন। সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী চিকিৎসা শুরু করবেন। ইতিমধ্যে রিপনের খোঁজখবর নিয়েছেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বোস। তিনি জানিয়েছেন, সবরকম ভাবে রিপনের পাশে আছেন। যদি কিছু দরকার লাগে, তাহলে তিনি আছেন। তবে জামশেদপুরের পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় যথেষ্ট হতাশ রিপন। এরকম পরিস্থিতি চললে জামশেদপুরে ফের ম্যাচ দেখতে যাবেন কি না, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে বলে জানাচ্ছেন তিনি।
তবে একটা বিষয় নিয়ে কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই রিপনের মনে। সেটা হল, জবাব হবে মাঠেই। জামশেদপুর সমর্থকদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তিনি। আর তাঁদের সামনেই খালিদ জামিলের দলকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালের টিকিট হাতে তুলে নেবে মোহনবাগান। সেটাই হবে 'আসল প্রতিশোধ'। রিপন বলছেন, "আমরা মোহনবাগান সমর্থক। মোহনবাগান সব সময় শিখিয়েছে, অন্যরা যতই গা-জোয়ারি করুক, আমরা মাঠে তার জবাব দেব। ওদেরকে হারিয়ে বুঝিয়ে দেব, মোহনবাগান বলতে আসলে কী বোঝায়। আমার রক্তের দাম আমাদের প্লেয়াররা দেবে।"
আর তো মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। সোমবার খালিদ জামিলের দল নামবে যুবভারতীতে। শুভাশিস, কামিন্সরা তো থাকবেনই, উপস্থিত থাকবেন হাজার-হাজার মোহনবাগান সমর্থক। আপাতত ২-১ গোলে এগিয়ে আছে জামশেদপুর। কিন্তু খেলার এখনও ৯০ মিনিট বাকি। পালটা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি মোহনবাগানও।