দুলাল দে, ভুবনেশ্বর: ভালো সময় সব কিছু চাপা পড়ে থাকে। আর ব্যর্থতা এলেই বেরিয়ে আসে চাপা পড়ে থাকা কঙ্কালসার চেহারা। যেমন শুক্রবার ডার্বি হারের পর মোহনবাগানের (Mohun Bagan) ক্ষেত্রে হয়েছে। কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) বিরুদ্ধে ৩-১ ব্যবধানে হারের পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক সমস্যা। যা জিতে গেলে হয়তো ধামাচাপাই পড়ে থাকত।
কোনও টেকনিক্যাল কারণ-টারণ নয়। ভাঙা দল নিয়ে সুপার কাপে (Kalinga Super Cup) যেহেতু প্রথম দু’ম্যাচে সত্যিই ভাল কোচিং করিয়েছেন, তাই ডার্বিতে ইচ্ছে করেই আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে (Antonio Lopez Habas) কোচের চেয়ারে না বসিয়ে ক্লিফোর্ডকেই কোচ রেখেছিল মোহনবাগান ম্যানেজমেন্ট। এর পিছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। প্রথম কথা, শুরু থেকেই দলটার সঙ্গে কোচ হিসেবে রয়েছেন ক্লিফোর্ড। হঠাৎ করে ডার্বির দু’দিন আগে এসে ক্লিফোর্ডের হাত থেকে কোচের ব্যাটন নিজের হাতে হাবাস যেমন তুলে নিতে চাননি। সেরকম মোহনবাগান ম্যানেজমেন্টও চায়নি, ভালো কোচিং করানো ক্লিফোর্ডকে ডার্বির আগে সরিয়ে দিতে।
[আরও পড়ুন: ডার্বিতে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে কুয়াদ্রাত, হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা কৃতিত্ব দিচ্ছেন ক্লেটন-নন্দদের]
তাই এদিন ম্যাচের পর সবুজ-মেরুন ম্যনেজমেন্টর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ‘‘কারা কী বলেছে জানি না। আমরা ডার্বিতে ক্লিফোর্ডকেই কোচ রেখেছিলাম। তাই হাবাস কোচের চেয়ারে ছিলেন না।’’ তবে হাবাস কোচের চেয়ারে বসুন বা না বসুন, ক্লিফোর্ডের কোচিং নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট ম্যানেজমেন্ট। ফলে মরশুম শেষ হলেও ক্লিফোর্ডের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে চলে যেতে পারে মোহনবাগান। এমনকী, ভবিষ্যতে যদি দেখা যায়, ভারতীয় কোচ হিসেবে দলের চিফ কোচের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এই প্রাক্তন গোয়ানিজ ফুটবলার, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে এটা এখনই ঠিক হয়ে গিয়েছে, এই মরশুমে আইএসএলের (ISL 10) বাকি ম্যাচগুলিতে কোচের দায়িত্বে থাকবেন হাবাসই। আর ক্লিফোর্ড মিরান্ডা তাঁর সহকারি।
কিন্তু কী হবে একাধিক ফুটবলারের? বিশেষ করে হুগো বুমোস (Hugo Boumous) আর জেসন কামিংসের (Jason Cummings)? এই দুই ফুটবলারের ভবিষ্যতের জন্য টিম ম্যানেজমেন্ট তাকিয়ে থাকবে হাবাসের সিদ্ধান্তের দিকে। বিশেষ করে হুগো বুমোস। যিনি এখন অতীতের ছায়া মাত্র। এই মরশুমের শুরুতেও তাঁকে দলে রাখার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না মোহনবাগান কর্তাদের। কিন্তু দীর্ঘ চুক্তির অজুহাতে থেকে যান তিনি। এদিনের পারফরম্যান্সের পর সম্ভব হলে এখনই বুমোসকে ছেড়ে দিতে চায় ম্যানেজমেন্ট। ডার্বি ম্যাচ। কিন্তু মাঠে যেন হাওয়া খেতে নেমেছিলেন বুমোস! সেই লড়াইটাই দেখা গেল না। বুমোসের ব্যপারে ম্যানেজমেন্ট এখন তাকিয়ে রয়েছে হাবাসের দিকে। তিনি যদি বলেন, বুমোসকে এখনই ছাঁটাই করে অন্য কাউকে নিয়ে আসতে, তাই হবে। সেরকম কামিংসের ব্যপারে খুব হতাশ হয়ে পড়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। এক শীর্ষ কর্তা বলছিলেন, ‘‘শেষ চার বছরে কামিংসের গোলের সংখ্যা দেখেছেন? সব দেখেশুনে নিয়ে আসার পর যদি এখানে গোল করতে না পারে, টিম ম্যানেজমেন্ট আর কী করবে?’’ বুমোসের পাশাপাশি কামিংসের ভবিষ্যৎ নিয়ে হাবাসের সঙ্গে আলোচনা করবেন কর্তারা। তবে মিডফিল্ডে অভিষেকের পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি ম্যানেজমেন্ট।
ডার্বি হারের জন্য ম্যাচের পর কোনও অজুহাত খাড়া করতে চাননি কোচ ক্লিফোর্ড মিরান্ডা। তবে দিমিত্রির পেনাল্টি থেকে গোলটা রেফারি কেন বাতিল করলেন, তা বুঝতে পারছেন না মোহনবাগান কোচ। তবে ম্যানেজমেন্ট মনে করছে, দ্বিতীয়বার যখন সুযোগ এল, পেনাল্টি থেকে গোলটা করা উচিত ছিল দিমিত্রির। পেনাল্টি নষ্টটাকেই টার্নিং পয়েন্ট মনে করছে মোহনবাগান।