সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রজার ফেডেরারের (Roger Federer) ঝুলিতে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। রাফায়েল নাদালের (Rafael Nadal) শোকেসে এখনই ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। আর নোভাক জকোভিচ (Novak Djokovic) ২১ টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। টেনিসের তিন মহানায়ক মিলে জিতেছেন ৬৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। রজার ফেডেরার টেনিস থেকে অবসর ঘোষণার পরে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চর্চায় শুধু ফেডেরার আর ফেডেরার। চর্চায় রয়েছেন রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচও। সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, ফেডেরার অসামান্য। তিনি অবিশ্বাস্য এক খেলোয়াড় বলেই রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ অন্য এক গ্রহে পৌঁছে যেত। তাঁদের লড়াই জন্ম দিয়েছে অসংখ্য রূপকথার। তিন মহাতারকার জন্যই সমৃদ্ধ হয়েছে টেনিস। উত্তরণ ঘটেছে টেনিসের।
১৯৯৮ সালে পেশাদার টেনিসে যাত্রা শুরু করেন সুইজারল্যান্ডের এক তরুণ। টেনিস তাঁর প্রথম প্রেম। পরবর্তীকালে তিনিই হয়ে ওঠেন টেনিসের সর্বকালের সেরা তকমার অন্যতম প্রধান দাবিদার। সব ধরনের কোর্টে ট্রফি জিতে, একের পর এক রেকর্ড ভেঙে, টেনিসপ্রেমীদের হৃদয়ে সম্রাটের আসন অধিকার করেন তিনি। একসময়ে বলা হত, ঘাসের কোর্টের তিনি রাজা। কিন্তু উইম্বলডন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, যুক্তরাষ্ট্র ওপেনেও ফুল ফুটিয়েছেন রজার ফেডেরার নামের এক কিংবদন্তি। একমাত্র লাল মাটির কোর্টেই ফেডেরারের ম্যাজিক বেশি চলেনি। সেখানে আবার রাফায়েল নাদালের রথ অপ্রতিরোধ্য থেকে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: টেনিসকে বিদায় জানালেন কিংবদন্তি ফেডেরার, শেষ হয়ে গেল ‘ফেডেক্স যুগ’]
রজার ফেডেরারের টেনিস র্যাকেট থেমে গেল বৃহস্পতিবার। থুড়ি, বলা ভাল নিজের রথ নিজেই থামিয়ে দিলেন ফেডেরার। ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর টেনিসকে বিদায় জানালেন সকলের প্রিয় রজার ‘রাজা’। শেষ হয়ে গেল ফেডেক্স যুগ। বলে দিলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে লন্ডনে শুরু হতে চলা লেভার কাপই তাঁর শেষ টুর্নামেন্ট। তার পর টেনিসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গ্র্যান্ড স্ল্যাম বা ট্যুরে যাবেন না তিনি। গোটা বিশ্ব আর দেখতে পাবে না সেই চোখ ধাঁধানো ফোরহ্যান্ড। অবিশ্বাস্য কিছু শট। যে শট দেখে একবার হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অ্যান্ডি রডিকও।
সুইস সুদর্শন তরুণ যে লম্বা রেসের ঘোড়া, আগে থেকেই তা আন্দাজ করতে পেরেছিল টেনিসবিশ্ব। জুনিয়র উইম্বলডনে একই বছরে সিঙ্গলস এবং ডাবলস দুই বিভাগেই ট্রফি জিতে সকলের নজরে পড়ে যান এই তরুণ। পেশাদার টেনিস জীবনের একেবারে প্রথম দিকে পিট সাম্প্রাস, আন্দ্রে আগাসিদের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন। তবে সেই সময়ের সাম্প্রাস বা আগাসি নিজেদের সেরা ফর্মের ছায়ামাত্র। হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝেও নিজের দাপট দেখিয়েছেন রজার। আলো ছড়িয়েছেন কোর্টে। ফেডেরারকে দেখেই টেনিস কোর্টে আসছেন তরুণ প্রতিভা।
২০০৩ সালে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন ফেডেরার। সেই সময় থেকেই ঘাসের কোর্টের সঙ্গে তাঁর সখ্যতার শুরু। ওই বছরেই এটিপি র্যাঙ্কিংয়েও এক নম্বরে উঠে আসেন তিনি। তারপর থেকেই টেনিসে শুরু হয় ফেডেরার যুগ। একের পর এক টুর্নামেন্টে হেলায় ট্রফি জিতেছেন তিনি। সেই সময় সেভাবে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়নি ফেডেরারকে। ফেডেরারের হাতে পড়ে এক অন্য উচ্চতায় ওঠে টেনিস।
এরপরেই ধীরে ধীরে টেনিস সার্কিটে রাফায়েল নাদালের উত্থান। ফেডেরার-নাদাল দ্বৈরথ টেনিসের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। দুই খেলোয়াড়ের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আখেরে লাভ হয়েছিল টেনিসেরই। তবে চোট আঘাতে জর্জরিত হয়ে মাঝে মাঝেই টেনিস থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন নাদাল। স্পেনীয় তারকা না খেলায় ফেডেরারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে আসেন নোভাক জকোভিচ। তাঁদের দ্বৈরথ থেকেও জন্ম নেয় টেনিসের একাধিক রূপকথা। ফেডেরার-রাফা-জোকার, এই তিন তারকা বছরের পর বছর টেনিস দুনিয়া শাসন করেন। এই তিন মহাতারকার টেনিস বিপ্লবে লাভবান হয় টেনিসই। এক অন্য গ্রহে পৌঁছায় এখনকার টেনিস।
২০২১ সালের উইম্বলডনের পর আর পেশাদার সার্কিটে নামেননি ফেডেরার। কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন, আর কোর্টে নেমে টেনিস খেলার আগ্রহ পান না। বয়স থাবা বসাচ্ছে, বিদ্রোহ করে বসছে শরীর। শেষ পর্যন্ত ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেই থামলেন সম্রাট।
[আরও পড়ুন: বাট্টা, বেবি ওভার, ট্রাই বল শব্দগুলির অর্থ কী? একমাত্র কোহলি জানেন এগুলোর মানে]