সুমন করাতি, হুগলি: পর্বতারোহন তাঁর রক্তে। একের পর এক শৃঙ্গ জয় করা তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। এবার আরও একটি লক্ষ্যপূরণ করলেন হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শুভম চট্টোপাধ্যায়। পৃথিবীর উচ্চতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ওজোস দেল সালাডো জয় করলেন শুভম। একাধিক প্রতিকূলতাকে জয় করে তিনি চূড়ায় উঠে ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়ালেন। তাঁর সাফল্যের খবর এসে পৌঁছেছে উত্তরপাড়ার বাড়িতে। ছেলের সাফল্যে খুশি বাবা-মা, প্রতিবেশীরা।
হুগলির উত্তরপাড়ার হিন্দমোটরের বাসিন্দা বছর সাতাশের শুভম চট্টোপাধ্যায়। পাহাড়ের প্রতি তাঁর ছোট থেকেই টান। একটু বড় হওয়ার পরই শুরু হয়েছিল পাহাড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ। ক্রমে একের পর এক শৃঙ্গ জয় করতে শুরু করেন তিনি। এবার তাঁর লক্ষ্য ছিল আর্জেন্টিনা চিলি সীমান্তে অবস্থিত ওজোস দেল সালাডো। এটি পৃথিবীর উচ্চতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। উচ্চতা ২২,৬১৫ ফুট বা ৬,৮৯৩ মিটার। এটি চিলির সর্বোচ্চ পর্বত হিসেবে পরিচিত। চিলি ও আর্জেন্টিনা সীমান্তে অবস্থিত আন্দিজ পর্বতের একটি স্ট্যাটো ভলক্যানো বলেও এর পরিচয় আছে। জানা গিয়েছে, ওজোস দেল সালাডোতে শেষ আগ্নেয় বিস্ফোরণ হয়েছিল প্রায় ১৩০০ বছর আগে। তবে ১৯৯৩ সালে এই আগ্নেয়গিরি থেকে সামান্য অগ্নিকুণ্ড নির্গমন হয়েছিল বলে খবর।
স্প্যানিশ নাম ওজোস ডেল সালাদোর অর্থ 'লবণের চোখ'। পাহাড়ের ৬,৩৯০ মিটার উচ্চতায় রয়েছে 'ক্রেটার হ্রদ'। যেটি বিশ্বের সর্বোচ্চ হ্রদ বলে মনে করা হয়। এই শৃঙ্গে ওঠার রাস্তা যথেষ্ট বিপজ্জনক। আবহাওয়াও যথেষ্ট প্রতিকূল। আবহাওয়া অত্যন্ত শুষ্ক, অক্সিজেনের মাত্রাও অনেকটাই কম। তবুও এই আগ্নেয়গিরি জয়ের লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন শুভম। এবার সরস্বতী পুজোর দিন বাড়ি থেকে চিলির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। অন্যান্য অভিযাত্রীদের সঙ্গে পাদদেশ থেকে রওনা হয়ে ১১ ঘণ্টা পরে তিনি ওজোস ডেল সালাদোয় উঠেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এই শৃঙ্গ জয় করেছেন। জানা গিয়েছে, ভারতবর্ষ থেকে প্রথম তিনিই এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
হিন্দমোটরের বাড়িতেও এই সাফল্যের খবর এসে পৌঁছেছে। হোয়াটসঅ্যাপ কলে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান বাবা চন্দন চট্টোপাধ্যায়। হিন্দমোটরের ওই ছোট্ট বাড়িতে বাবা-মা ও ভাইকে নিয়ে সংসার শুভমের। শুভমের ডাকনাম রনি। পরবর্তীকালে এলাকায় সে মাউন্টেনিয়ার রনি নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। জানা গিয়েছে, শুভম চিলি থেকে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন তাঁর ফেরার অপেক্ষায় পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
