সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘কে শাহিদ আফ্রিদি? কেন তাঁকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কিছু কিছু মানুষকে গুরুত্ব দেওয়াই উচিত নয়!’ শাহিদ আফ্রিদির বিতর্কিত টুইট প্রসঙ্গে ৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেব একথা বলেছিলেন। একা কপিল কেন, আফ্রিদিকে তুলোধোনা করেন প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীরও। জানান, নো বলে আউট করে নাচানাচি করাটা পাকিস্তানিদের স্বভাব। আর আফ্রিদি বিতর্কে এবার মুখ খুললেন জাতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। বললেন, ‘আমার কাছে দেশই সবার আগে।’
[চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রোনাল্ডোর বিস্ময় গোলে ঘোর কাটছে না ফুটবল বিশ্বের]
বিতর্কের সূত্রপাত আফ্রিদির একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা দমনপীড়ন চালাচ্ছে, এই অভিযোগে সরব হন আফ্রিদি। ক্রিকেটের ২২ গজ সংক্রান্ত আলোচনা ছেড়ে আচমকাই ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলেন বুমবুম আফ্রিদি। টুইটে লেখেন, ‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। অবাক হচ্ছি, রাষ্ট্রসংঘে এই ইস্যুতে নীরব। রক্তস্নান ঠেকাতে কেন কেউ কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।’ এখানেই না থেমে আফ্রিদি আরও অভিযোগ তোলেন, ভারতীয় সেনা নিরীহ কাশ্মীরিদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এতেই প্রবল চটেন ভারতীয়রা। কাশ্মীর ইস্যু একটি সংবেদনশীল বিষয়। এহেন ইস্যু নিয়ে আফ্রিদির যেচে উপদেশ মেনে নেননি অনেকেই। সুরেশ রায়নাও প্রবল চটে গিয়ে লেখেন, ‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল ও থাকবে। আমার মনে হয় আফ্রিদি পাক সেনাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ও কাশ্মীরে ছায়াযুদ্ধ থামানোর কথা বলেছেন। আমরা শান্তি চাই, রক্তপাত ও সন্ত্রাস নয়।’
বস্তুত, কাশ্মীরের সমস্যা নিয়ে যাঁরা ওয়াকিবহাল সেই সব প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিদি নিজে কিছুই বলতে চাননি সম্ভবত। এসব কথা পাক সেনা তাঁর মুখ দিয়ে বলিয়েছে। কাশ্মীরের মানুষকে খেপিয়ে তোলা পাকিস্তানের বহু পুরনো নীতি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকে উঠতে না পেরে, পাক সেনা ও জঙ্গিদের যৌথবাহিনীর নয়া পন্থা, টাকা দিয়ে ভূস্বর্গের সাধারণ মানুষকে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা। অল্পশিক্ষিত, গরিব যুবক-যুবতীরা পাক জঙ্গিদের ফাঁদে পা দিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। জঙ্গিদের তাড়া করলে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। সেনাও একথা বিলক্ষণ জানে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গুলি চালালেও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে গুলি চালাতে চায় না সেনা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কখনও পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলেও সেনা শেষ পর্যন্ত গুলি চালাতে চায় না। পেলেট গানের ব্যবহারও উপত্যকায় এখন প্রায় বন্ধ। জঙ্গিবাদকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে পড়াশোনা শিখিয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে চায় সেনা। কিন্তু এই প্রক্রিয়া মাঝেমধ্যেই পাক সেনার গোলাবৃষ্টির জেরে বিঘ্নিত হয়। তখন স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়। পালটা জবাব দিতে হয়। তখন এঁটে উঠতে না পেরে পাক সেনা-জঙ্গিরা পিছু হটে।
কিন্তু পাক সেনা এখন আরও ধূর্ত হয়ে উঠেছে। জঙ্গি নয়, সাধারণ মানুষের ব্রেনওয়াশ করে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেনার বিরুদ্ধে। কোনও কোনও মহলের অভিযোগ, ইসলামাবাদকে আরও সুবিধা করে দিচ্ছে কাশ্মীরের কিছু চরমপন্থী সংগঠন, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মের জিগির তুলে ক্ষমতার স্বাদ পেতে চাওয়া দুষ্কৃতীরা। গত রবিবারই জম্মু ও কাশ্মীরে ১২ জন জঙ্গিকে নিকেশ করে সেনা। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় জঙ্গিদমন অভিযান ঘটেনি। দেশকে বাঁচাতে গিয়ে শহিদ হন ৩ জওয়ানও। অথচ, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা যায় নিহত জঙ্গিদের প্রতি সমবেদনা। শহিদ জওয়ানদের নিয়ে কোনও শব্দ কিন্তু খরচ করেননি আবদুল্লা। আফ্রিদির বক্তব্যকেই যেন কার্যত সমর্থন করেন। অন্যদিকে, প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার আফ্রিদিকে তুলোধোনা করে বলেন, ‘আফ্রিদির অভিধানে ইউএন (রাষ্ট্রসংঘে) মানে শুধুই অনুর্ধ্ব উনিশ। ওরা সব সময় নো বলে আউট করে সেলিব্রেশন করে।’ অপেক্ষা ছিল কখন কোহলি এই নিয়ে মুখ খোলেন! আর এদিন খুললেনও। বুধবার আফ্রিদির টুইটের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বললেন, ‘আমার কাছে দেশ সবার আগে। একজন ভারতীয় হিসাবে আমি চাইব দেশের ভাল হোক। যে আমার দেশের ক্ষতি চাইবে, আমি তাঁদের সমর্থন করি না।’ এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘কোনও কোনও বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার আগে পুরোটা জেনে রাখতে হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি পুরোটা জানি না। তবে আমি সবসময় আমার দেশের পক্ষে।’
[কাশ্মীর ইস্যুতে টুইটারে ভারতকে কটাক্ষ আফ্রিদির]
রইল আফ্রিদির সেই বিতর্কিত টুইট:
The post শাহিদ আফ্রিদিকে তুলোধোনা গম্ভীর, রায়নার! মুখ খুললেন বিরাটও appeared first on Sangbad Pratidin.