আর্জেন্টিনা: ২ (মেসি, আলভারেজ)
অস্ট্রেলিয়া: ১ (গুডউইন)
দুলাল দে, দোহা: আহা কী দেখিলাম! চোখ জুড়িয়ে যায়। ওই বাঁ পা যে বাঁধিয়ে রাখতে হয়। আর খেলা শেষের পরও এ দৃশ্য তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে নকআউট পর্বে মেসির গোল দেখে যেন এসব কথাই বলে উঠছিলেন তাঁর অনুরাগীরা। এ তো শুধু গোল নয়। পেনাল্টি মিসের হতাশা কাটিয়ে নিজের কাছে জবাব দেওয়া। মরণ-বাঁচন ম্যাচে দলকে আত্মবিশ্বাস জোগানো। দেশবাসীর আরও একটু ভালবাসা কেড়ে নেওয়া। আর নিঃশব্দে টপকে যাওয়া দিয়েগো মারাদোনাকে। যিনি হয়তো দূরে কোনওখানে বসে লিওনেল মেসির এমন পারফরম্যান্সে হাতহালি দিচ্ছেন।
কাতার ইতিমধ্যেই অঘটনের বিশ্বকাপের তকমা পেয়েছে। বিদায় ঘটেছে একাধিক জায়ান্ট কিলারের। চমক দিয়েছে এশিয়ার দেশগুলি। তাই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হালকা ভাবে নেননি স্কালোনিও। মেসিকে উপরে তুলে এনে দু’পাশে গোমেজ ও আলভারেজকে রেখে ফরোয়ার্ড লাইন সাজিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ। ডি মারিয়ার চোট খেলা শুরুর আগে থেকেই চিন্তায় রেখেছিল স্কালোনিকে। শেষমেশ তাঁর পরিবর্তে গোমেজকে নিয়ে প্রথম একাদশ সাজান তিনি। তবে এদিনও সুযোগ হয়নি দিবালার।
[আরও পড়ুন: ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! বিমানে হারিয়েছে ব্যাগ, মেলেনি খাবার, ক্ষোভ তারকা ক্রিকেটারের]
এদিকে মেসিদের (Lionel Messi) আটকাতে শুরু থেকে রক্ষণশীল ফুটবল খেলতেই দেখা গেল অস্ট্রেলিয়াকে। সেটপিস ছাড়া সেভাবে আর্জেন্টাইন ডেরায় হানা দিলেন না আর্নল্ডের ছেলেরা। মেসিকে মার্কিং করে রুখে দেওয়ার চেষ্টা হয় একাধিক বার। তবে তাঁকে যে আটকানো বড়ই কঠিন। তাই তো অজি ডিফেন্সিভ লাইনকে অসহায় করে দিয়ে ছবির মতো গোল এঁকে দিলেন এলএম টেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে আরও একবার গোলে শট নেন তিনি। তবে তার ঠিকানা হয় অজি গোলকিপারের গ্লাভসে।
শাপমুক্তি ঘটিয়ে নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে প্রথম গোল করলেন মেসি। আর সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলের (৯) মালিক হলেন। টপকে গেলেন মারাদোনাকে। একটি গোল বেশি নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বাতিস্তুতা (১০)। নিজের শেষ বিশ্বকাপে পারবেন নয়া ইতিহাস গড়তে? খেলার শেষ লগ্নে গোলের সহজ সুযোগ মিস না করলে হয়তো এদিন লেখা হত সেই রূপকথা। তবে শনিবাসরীয় রাতে এ-ই বা কম প্রাপ্তি কী। মেসির পায়ের জাদুতে রামধনু রং ছড়াল আর্জেন্টাইন শিবিরে। গত ম্যাচে পেনাল্টি মিস করার মলিনতা মুছে দিলেন মহাতারকা। রবি ঠাকুরকে ধার করে বলতে হয়, ‘কী মায়া দেয় বুলায়ে, দিল সব কাজ ভুলায়ে…।’
এদিন দ্বিতীয়ার্ধে আলভারেজের গোলই আর্জেন্টিনার শেষ আট নিশ্চিত করে দেয়। তবে জোড়া গোল হজম করেও হাল ছাড়েনি অস্ট্রেলিয়া। আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় দল। একটি গোল শোধ করেন গুডউইন। ঝাঁপান দ্বিতীয় গোলের জন্যও। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালান অজিরা। তবে ততক্ষণে ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছে। এবারের মতো তাদের বিশ্বকাপ অভিযান এখানেই শেষ। আর মেসিরা খেলবেন নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। তাঁদের পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে, এবার লম্বা রেসের ঘোড়া লা আলবিসেলেস্তা।