২৭ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি ‘পিয়া রে’। ফের সোহমের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন টলিউডের অন্যতম সুন্দরী অভিনেত্রী। ছবি মুক্তির আগে আড্ডায় অকপটে শ্রাবন্তী। কথা বললেন সোমনাথ লাহা।
[সম্পর্কের টানাপোড়েন কি সত্যিই দেখাতে পারল ‘গহীন হৃদয়’?]
শ্রাবন্তী তোমার এতবছরের কেরিয়ার জীবনে তুমি অনেকরকমের ছবিতে অভিনয় করেছ। এই ছবির কোন বিষয়টা তোমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে?
শ্রাবন্তী: সত্যি কথা বলতে, এই ছবির গল্পটা আমার ভীষণ ভাল লেগেছে। অনেকদিন পরে আমাদের বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এটা একটা পুরোপুরি প্রেমের ছবি। এককথায় বলতে পার, ভালবাসার ছবি।
ছবিটা তো বেশ রিয়েলিস্টিক। ছবির ট্রেলার দেখে সেরকমই মনে হয়। ইতিমধ্যেই ‘পিয়া রে’-র ট্রেলার তো বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। এমনকী ছবির কিছু দৃশ্য তো …
শ্রাবন্তী: (প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই) ছবির কিছু দৃশ্য দেখলে দর্শকদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে। এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে আমরা কেউ একফোঁটা গ্লিসারিনের ব্যবহার করিনি। এতটাই ইমোশনাল দৃশ্য ও সংলাপ রয়েছে এই ছবিতে।
ছবিতে তোমার তো কোনও মেকআপ ছিল না?
শ্রাবন্তী: অভিদা (পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়) আমার মেকআপ করতেই দেয়নি (হাসি)। এমনকী এসে দেখত শটের আগে যে আমি মেকআপ করেছি কি না। একজন অভিনেত্রী হিসাবে এটাও আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। নো-মেকআপ লুকে একটা পুরো ছবি করেছি।
ছবিতে তোমার চরিত্রটা নিয়ে কিছু বল।
শ্রাবন্তী: এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম রিয়া। রিয়া একটা বস্তিতে থাকে। রিয়ার বাবা নেই। মা আর দাদার সঙ্গে মেয়েটি থাকে। ভীষণ কষ্ট করে ওদের সংসার চলে। তার মধ্যেও মেয়েটা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে। রিয়া পড়াশোনা করে, তবে ওর দাদা একজন গুন্ডা। সেই চরিত্রে কাঞ্চনদা (কাঞ্চন মল্লিক) রয়েছেন। কাঞ্চনদাকে এই ছবিতে একদম অন্যরকমের চরিত্রে দেখতে পাবে দর্শকরা। মেয়েটি বাচ্চাদেরকে ভীষণ ভালবাসে। যেটা বাস্তবে আমি নিজেও (হাসি)। আমি ভীষণ বাচ্চা ভালবাসি। বাচ্চারাই রিয়ার বন্ধু। বাচ্চাদের সঙ্গে সে ক্রিকেট খেলে। খুব মিষ্টি আর সোবার (Sober) একটা চরিত্র।
বাস্তবে এই রকমের চরিত্র কি তুমি দেখেছ?
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ দেখেছি। আমি বেহালা পর্ণশ্রীর মেয়ে। আমাদের বাড়ির পিছনেই বস্তি ছিল। আর আমি তো ছোটবেলায় ওই বস্তির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গিয়েও খেলতাম (হাসি)। আর আমার কাছে এরকম কোনও ব্যাপার ছিল না যে ওরা বস্তিতে থাকে বলে ওদের পাত্তা দেব না। আমি ছোটবেলায় এগুলো দেখেই বড় হয়েছি। সেভাবে দেখতে গেলে আমিও ভীষণ পাড়ারই মেয়ে বলতে পার। (হাসি)।
তাহলে সেদিক থেকে দেখতে গেলে রিয়া চরিত্রটার সঙ্গে তুমি অনেকটাই মিল খুঁজে পেয়েছো?
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ, অনেকটাই মিল খুঁজে পেয়েছি। ওদের কথা বলা, ডাকার স্টাইল এগুলো সবই আমার দেখা। আমার কাছে তাই পর্দায় বস্তির একটা মেয়ের চরিত্র ফুটিয়ে তোলাটা কোনও সমস্যাই ছিল না। বস্তির এই বিষয়গুলো আমি যেহেতু দেখেছি তাই করতে অসুবিধা হয়নি।
[সমালোচনা সত্ত্বেও প্রথমদিনে বেশ ভালই ব্যবসা করল ‘ধড়ক’]
এই ছবির গান ও তো বেশ হিট। তোমার প্রিয় গান কোনটা?
শ্রাবন্তী: আমার প্রিয় গান ‘আমি তোর নেশাতে।’ এই গানটা আমার ভীষণই পছন্দের। ছবির প্রতিটা গানই একদম আলাদা। খুবই সিচ্যুয়েশনাল। এমনকী সোনু নিগম যে গানটা গেয়েছেন…
ছবির টাইটেল ট্র্যাকটা?
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ, ‘পিয়া রে’ গানটার মেল ভার্সন। সেটাও আমার খুব ভাল লেগেছে। এমনকী এই গানটার ফিমেল ভার্সনটা যে গেয়েছে সেও খুবই ভাল গেয়েছে। প্রতিটা গানই ছবির গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্যধারার যে ছবিগুলোতে তুমি কাজ করেছ, সেগুলো দর্শকরা বেশ পছন্দ করেছেন। এমনকী তার সঙ্গে মিলও খুঁজে পেয়েছেন। তা সে ‘উমা’ই হোক বা ‘গয়নার বাক্স’। এই ধরনের চরিত্রে আবার কবে তোমায় দেখতে পাব?’ করবে তো এরকম চরিত্র?
শ্রাবন্তী: নিশ্চয়ই করব। ভাল চরিত্র পেলে অবশ্যই এই ধরনের ছবিতে আবার কাজ করব। আমাদের মতো অভিনেতা/অভিনেত্রীদের সবসময় ভাল চরিত্রে কাজ করার খিদে রয়েছে। ভগবানের আশীর্বাদে যদি সেরকম ভাল চরিত্র পাই মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করতে চাইব।
ওয়েবে কাজ করার ব্যাপারে কিছু ভেবেছ?
শ্রাবন্তী: আপাতত ওয়েবটা নিয়ে আমি ভাবছি না। যদি ভবিষ্যতে সেরকম ভাল গল্প বা চরিত্র পাই তাহলে নিশ্চয়ই করব। আপাতত আমি আমাদের বড়পর্দা, বলতে পার মাল্টিপ্লেক্স/সিঙ্গল স্ক্রিনেই বেশ ভাল আছি (হাসি)। এখানেই আপাতত রয়েছি।
[ফের সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক, এবার ‘সঞ্জু’ তৈরি করছেন রামগোপাল]
তুমি একবার বলেছিলে যে তোমার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক তোমার ছেলে ঝিনুক। ‘পিয়া রে’ দেখে ঝিনুক কী বলছে?
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ, ঝিনুক আমার কাজের বড় সমালোচক। (হাসি) ও ‘পিয়া রে’ দেখার জন্য খুবই উৎসাহিত। কারণ এটা ভীষণরকম ইয়াং জেনারেশনের গল্প। ও দেখবে ছবিটা।
পর্দায় সোহমের সঙ্গে তোমার কেমিস্ট্রি দর্শকদের বেশ পছন্দের। সেইজন্য তোমাদের দু’জনের এই ছবিকে ঘিরে দর্শকদের প্রত্যাশার পারদটা ক্রমশ বাড়ছে। এ বিষয়ে তোমার কী মত?
শ্রাবন্তী: আসলে ‘অমানুষ’ থেকেই দর্শক আমাদের জুটিটাকে ভীষণ ভালবেসেছে। আমাদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি ও দর্শকদের বেশ ভাল লেগেছে। সোহম আমার ছোটবেলার বন্ধু। ১৯৯৭-তে ‘মায়ার বাঁধন’ ছবিতে আমরা প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। তখন ও শিশুশিল্পী, আমিও শিশুশিল্পীই ছিলাম। সেদিক থেকে দেখতে গেলে সোহম আমার সবথেকে পুরোনো হিরো। আমরা একসঙ্গে টেলিফিল্মও করেছিলাম। ছোটবেলাকার প্রেম নিয়ে। ও আমার বিপরীতে ছিল।
এরকম কিন্তু খুব একটা দেখা যায় না?
শ্রাবন্তী: একদমই তাই। এরকম সচরাচর দেখা যায় না। (হাসি), এমনকী আমাদেরকে ছোটবেলায় দেখে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) বলেছিলেন যে তোরা একদিন বড় হয়ে হিরো-হিরোইন হবি। দেখবো তখন তোদের ছবি। সেটা ফলে গিয়েছে (হাসি)। আর এমনিতেও আমি সোহমের অভিনয়ের ফ্যান। ও একজন অসাধারণ অভিনেতা।
খুব স্বতঃস্ফূর্ত তো …
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ ঠিক তাই, সোহম ভাষণ স্বতঃস্ফূর্ত অভিনেতা। ওর টাইমিং সেন্স, কমেডি হোক বা ইমোশন, লাভ-রোম্যান্স সব জায়গাতেই বেশ ভাল।
কমেডিতে তুমিও কম নও।
শ্রাবন্তী: (খুব জোরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে) আমরা সারাক্ষণই কমেডি করি। অফস্ক্রিনে আমরা সবাই মজা করি। আমরা একটা টিম বলতে পারো। অভিদা (পরিচালক) থেকে শুরু করে আমরা সকলে ‘পিয়া রে’র শুটিংয়ের সময় সবাই আড্ডা মারতাম, মজা করতাম।
ছবির শুটিংয়ে তাহলে বেশ মজা করেছো?
শ্রাবন্তী: করিনি আবার, পুরো ইউনিটটাই ইয়ং, আমরা শুধু অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক নয়, সিনেমাটোগ্রাফার, মেকআপ টিম, ক্যামেরার টিম মেম্বাররা সকলে একত্রিত হয়ে সময় কাটাতাম। আনন্দ করতাম। ‘পিয়া রে’-র শুটিংয়ের দিনগুলো তাই খুব মিস করি।
তুমি তো অভিমন্যুর পরের ছবিটাতেও কাজ করছো?
শ্রাবন্তী: হ্যাঁ, ‘গুগলি’তে আমি অভিদার সঙ্গে কাজ করেছি। ছবির শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে। কী জানো তো, অভিমন্যুদার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা ভীষণ ভাল আমার কাছে।
‘গুগলি’ ছাড়া আর কোন ছবিতে তোমাকে আগামী দিনে দেখতে পাব?
শ্রাবন্তী: ‘বাঘ বন্দী খেলা’-তে। তিনটে গল্প নিয়ে এই ছবি। এর মধ্যে ‘বন্দী’-তে আমি আর সোহম রয়েছি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটা ছবি নিয়ে কথাবার্তা চলছে।
আর ‘বীরপুরুষ’? ওই ছবিতেও তো তুমি কাজ করেছ?
শ্রাবন্তী: ওটার প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ৫ শতাংশ মতো কাজ বাকি রয়েছে। দেখা যাক ঈশ্বরের কী অভিপ্রায়। আশা করছি সঠিক সময়েই ছবিটা রিলিজ করবে। ওই ছবিতেও দর্শক আমাকে একেবারে অন্যরকমের একটা চরিত্রে দেখতে পাবে। (হাসি)
[জীবন সায়াহ্নে এসে সত্যান্বেষণে আদৌ সফল হলেন কি বৃদ্ধ ব্যোমকেশ?]
The post ‘পিয়া রে’ দেখে কী বলল তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচক, ফাঁস করলেন শ্রাবন্তী appeared first on Sangbad Pratidin.