গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: বাথটবে মৃত্যুদৃশ্য সেলুলয়েড বন্দি হয়েছিল আগেই। অন্ধাকানুন এর সেই মারকাটারি সিকোয়েন্স। শ্রীদেবীর মৃত্যুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর সেই দৃশ্যই মনে করাল অনেককে। ঝকঝকে দুধসাদা এক বাথটব, তাতেই ডুবে যাচ্ছেন ‘রূপ কি রানি।’
রুপোলি পর্দায় আকণ্ঠ মদ্যপান করিয়ে রজনীকান্ত বাথটবে নামিয়ে দিয়েছিলেন ড্যানিকে। সেখান থেকে আর উঠে আসা হয়নি খলনায়কের। এক হাত জলেই ডুবে গিয়েছিলেন। শ্রীদেবীর বাথটবে ডুবে মৃত্যুর কারণ এখনও পুরোপুরি জানতে পারেনি তদন্তকারীরা। শুধু ফরেনসিক রিপোর্টে অ্যালকোহল মিলেছে তাঁর রক্তে। আর চিকিৎসকরা বলছেন, মদ খেতে খেতে যদি সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে কেউ। তাহলে বাথটব কেন, গামলার জলে ডুবেও মৃত্যু হতে পারে। মৃগী আক্রান্ত রোগীদেরও হাঁটুজলে ডুবে মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, জলে নামার পর যদি খিঁচুনি শুরু হয়, সেক্ষেত্রে রোগীর পক্ষে উঠে আসা সম্ভব হয় না। এছাড়া শ্যালো ওয়াটার ব্ল্যাকআউট-এর মতো অসুখ তো আছেই।
[কেন অল্পবয়সেই মৃত্যুর কোলে? শ্রীদেবীর প্রয়াণে কী পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের?]
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সবসময়ই মনের মধ্যে একটা ভাল ‘ভয়’-এর অনুভুতি থাকে। কোনও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার আগে এই ভয়ের অনুভূতিই আমাদের সাবধান করে দেয়। কিন্তু মদ খেতে শুরু করলে এই ভয়টা কমতে থাকে। সেই সঙ্গে কমে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ। মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ও কমতে থাকে। স্বাভাবিক মানুষ এমন অনেক কাজই করতে চান না, যা মদ্যপ মানুষ অনায়াসে করে ফেলেন। অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান করলে একটা সময়ের পরে ‘মাসল ইনকর্ডিনেশন’ শুরু হয়। এর পরেই ‘সেমি-কোমা’। এই পর্যায়ে এলে রোগীর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না নিজের উপর, কার্যত অচেতন অবস্থায় চলে যান। ফলে বাথটব কেন, বালতিতেও সলিলসমাধি হতে পারে। এমনটাই জানালেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. শান্তনু চট্টোপাধ্যায়। মদ খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা বহু রোগীর চিকিৎসা করেছেন শান্তনুবাবু। মদ খেয়ে পুকুরে তলিয়ে যাওয়া বহু রোগী জরুরি বিভাগে দেখেছেন তিনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে রোগীর।
শুধু এদেশেই নয়, আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই একজন মারা যান বাথটবে ডুবে। সে দেশের হাওয়ার্ডস নিউজ সার্ভিস এক সমীক্ষা চালিয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। দেখা গিয়েছিল ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ এই পাঁচ বছরে আমেরিকায় ১৬৭৬ জন বাথটবে ডুবে মারা গিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে জানতে পারেন, এরা সকলেই আকণ্ঠ মদ্যপান করে বাথটবে স্নান করতে নেমেছিলেন। কি অদ্ভুতভাবে সকলেই শক্ত সমর্থ। সকলেরই বয়স ছিল ৬৪—র মধ্যে। অদ্ভুত সমান্তরালরেখায় শ্রীদেবীর ময়নাতদন্ত রিপোর্টও বলছে ‘ড্রাউনিং ইন বাথটব’।
[দোলে রং মাখুন আনন্দে, তবে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন]
আকণ্ঠ মদ্যপান করে বাথটবে নামতে তাই বারণই করছেন চিকিৎসকরা। এমআর বাঙুর হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. শুভব্রত পাল জানিয়েছেন, “জলে ডোবা রোগীর ধাঁচেই চিকিৎসা করতে হবে বাথটবে ডুবে যাওয়া মানুষের। ফুসফুসে জল ঢুকে গেলে জলদি তা বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। তৈরি রাখতে হবে ভেন্টিলেটার।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলে ডোবা রোগীদের পালমোনারি ইডিমা হয়। রক্তচাপ কমতে থাকে। এইসময় ল্যাসিক গোত্রের ইঞ্জেকশন দিয়ে শরীর থেকে জল বের করতে হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে ডোপামিন গোত্রের ওষুধ। ছোট বাথটবে প্রায় ৪০ গ্যালন জল ধরে। তবে বড়সড় বাথটবে কানায় কানায় জল ভর্তি হলে ১০০ গ্যালন জল ধরে। সাধারণত ছোট ফ্ল্যাটের যে ইন্ডিয়ান স্টাইলের বাথটব, তার গভীরতা ১৪ থেকে ১৭ ইঞ্চি। কিন্তু বড় হোটেল অথবা ঝাঁ চকচকে আবাসনে ইউরোপিয়ান বা গ্রিক স্টাইলের বাথটব ব্যবহার হয়। তার গভীরতা ১৮ থেকে ২২ ইঞ্চি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রীদেবীর সলিল সমাধি হয়েছে এমন বাথটবেই।
[ব্রকলি আর কড়াইশুঁটির এত গুণ আগে জানতেন?]
The post এক বালতি জলে ডুবেও হতে পারে মৃত্যু! কী বলছেন চিকিৎসকরা ? appeared first on Sangbad Pratidin.