shono
Advertisement

‘গেরুয়া চাপিয়ে যেটুকু করে খাচ্ছেন, একবিন্দুও জুটত না’, স্বামীজি-রামকৃষ্ণর নিন্দুককে তোপ শ্রীজাতর

দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে বোঝালেন ধর্ম আর জ্ঞানের গুরুত্ব।
Posted: 03:55 PM Jul 16, 2023Updated: 03:59 PM Jul 16, 2023

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বামী বিবেকানন্দের ‘গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলা ভাল’ বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করেছিলেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণের ‘যত মত তত পথ’ বক্তব্য নিয়েও করেছিলেন বিদ্রুপ। সেই অমোঘ লীলা দাসকে (Amogh Lila Das) একহাত নিলেন শ্রীজাত। দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করলেন ইসকনের ব্রহ্মচারীকে।

Advertisement

‘ইন্টারনেট বনাম অন্তরনেত্র’ শীর্ষক পোস্টে শ্রীজাত লেখেন, “বিষয়টা ইয়ার্কিরও নয়, তাচ্ছিল্যেরও নয়। বরং ভেবে দেখবার। এই অমোঘ লীলা দাস যা বলেছেন এবং যে-অঙ্গভঙ্গি সহকারে ও যে-ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলেছেন, তার উৎপত্তি হঠাৎ হয়নি। তিলে তিলে হয়েছে। নয়তো কোনও ‘প্রাতিষ্ঠানিক সন্ন্যাসী’ (যতই হাস্যকর শোনাক, এটাই সত্যি) হুট করে এ-ধরনের কথা বলবার সাহস পান না। কর্পোরেট সাধুদের একদিন এ-রাস্তা নিতেই হতো, কারণ অতীতের ঐতিহ্যকে বর্তমানের গৌরব দিয়ে রক্ষা করবার যে-সংস্কৃতি, তা বড় কঠিন। এই সহজায়নের দিনে সে-পথ বেছে নেবার কেউ আছেন বলে আর মনে হয় না।”

এরপরই ধর্মকে ধারণ করার অর্থ বোঝান শ্রীজাত। লেখেন, “আমি যদি গান লিখতে এসে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করি বা ফিজিক্স পড়াতে গিয়ে আইনস্টাইনকে অস্বীকার করি, তাহলে যেমনটা হবে, ইনিও ঠিক তেমনটাই করেছেন। মুশকিল হয়েছে কী, এঁদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণ কেবলই একজন পূজারী পুরোহিত এবং স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র একজন গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী হয়ে থেকে গেছেন। এই দুই মানুষের তথা মনীষীর ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি, দর্শন, চিন্তাধারা বা সামগ্রিক অবদান, এসবের কিছুই জেনে দেখা হয়নি। অজ্ঞানতা অবশ্য একধরনের ক্ষমা দাবি করতে পারে, কিন্তু এর উলটোদিকটা আরও মারাত্মক। তা হল, জেনেও অবজ্ঞা করা, বুঝেও তাচ্ছিল্য করা। এর মধ্যে একধরনের অপরায়নের রাজনীতি কাজ করে। উড়িয়ে দাও। নেগেট করো। তা যদি নিজের অশিক্ষা বলে প্রমাণিত হয়, তাও করো। দুই বাঙালির মহাজোট যে-অসাধ্যসাধন করে গেছে, প্রাদেশিকতার ঘোমটার আড়াল থেকে তাকে অন্যায্যের খেতাব দাও।”

[আরও পড়ুন: নৈশভোজে মোদি-ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সেলফি, উচ্ছ্বসিত মাধবন, কী শিখলেন দুই রাষ্ট্রনেতার কাছে?]

শ্রীজাতর বক্তব্য, অমোঘবাবু বোধহয় ভুলে গেছেন, যে-বহুতল বাড়ির ৪৫, ৬৭ বা ৮৩ তলার কোনও একখানা কামরা থেকে তিনি গলা তুলে কথা বলছেন, সেই বহুতলের ভিতটার নাম স্বামী বিবেকানন্দ। আর যে-জমিতে সেই ভিত খোঁড়া হয়েছিল, সেই জমিটার নাম পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণ। লেখকের কথায়, “আজ গেরুয়া বসন গায়ে চাপিয়ে কপালে তিলক কেটে মুখে মাইক এঁটে যেটুকু করে খাচ্ছেন, তার একবিন্দুও জুটত না, এই দু’জন মানুষ ধর্মচর্চার দরজা হাট করে খুলে না-দিলে। কাজটা হয়তো একা হাতে করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ, কিন্তু তাঁর মাটিকে প্রতিমায় রূপান্তরিত করেছেন যে-কারিগর, সেই শ্রীরামকৃষ্ণের অবদানই বা কম কীসে?”

শিকাগো বক্তৃতার জন্য শ্লেষের সঙ্গে স্বামীজিকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলেছিলেন অমোঘ লীলা দাস। তা নিয়েও পালটা দেন শ্রীজাত। তিনি জানান, শ্রীরামকৃষ্ণের ‘যত মত, তত পথ’ প্রবচনটি নিয়ে ঠাট্টা করবার সময়েও অমোঘবাবুর নিশ্চয়ই বুঝতে পারেননি যে চার শব্দের এই একটি বাক্যের মধ্যে ধর্মচর্চার কত বড় ঔদার্য ও আধুনিকতার পাঠ লুকিয়ে আছে। শ্রীজাত বলেন, “আমিষ ভোজন নিয়ে নিদান দিচ্ছেন যখন অমোঘবাবু, তখন নিশ্চয়ই তাঁর এ-খেয়াল হয়নি যে, স্বামী বিবেকানন্দ কেবলমাত্র আরেকজন সন্ন্যাসী নন। তাঁর স্বল্পায়ু জীবনরেখায় যে-ত্যাগ, যে-লড়াই, যে-কৃচ্ছসাধন, যে-তিতিক্ষা, যে-আত্মবিশ্বাস আর যে-দুঃসাহস তিনি দেখিয়ে গেছেন, তা কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে কখনও সম্ভব হতো না। একটা গোটা সমাজের পথপ্রদর্শক ও প্রতিনিধি হয়ে ওঠার জন্য কেবল সন্ন্যাসীর বসন যথেষ্ট নয়, অন্তরটুকুও তেমন হওয়া জরুরি। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি বেশিদিন জীবিত থাকেননি এবং তাঁর মতো আর একজনকেও আমরা আজ অবধি পাইনি। পেলে, বাঙালি জাতির ইতিহাস অন্যভাবে রচিত হতো।”

সবশেষে শ্রীজাত লেখেন, “ওঁর (অমোঘ লীলা দাস) ছবি পোস্ট করবার কোনও বাসনাই আমার ছিল না, করলাম কেবল একটি কারণে। ‘সন্ন্যাস’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সমস্ত জাগতিকতাকে নিচে নিক্ষেপ করা, পরিত্যাগ করা। যেমন উনি স্বামী বিবেকানন্দের আমিষ ভোজন নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে বলেছেন। কিন্তু বেচারা নিজে এখনও Tommy Hilfiger-এর হাতঘড়ি পরিত্যাগ করতে পারেননি। সামান্য দৈনন্দিন সময় দেখার জন্য যাঁর এত বহুমূল্য ঘড়ি প্রয়োজন হয়, তিনি দ্রষ্টা হবেন কোন মুখে?”

এদিকে ‘যত মত তত পথ’-এর অপব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ইসকনের ব্রহ্মচারীকে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রায়শ্চিত্ত তাঁকে করতে একমাসের জন্যে পাঠানো হয়েছে মথুরায়। ইসকনের তরফে রাধারমণ দাস এই খবর জানিয়ে বলেছেন, “নিজের কৃতকর্মের জন্যে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন অমোঘ লীলা স্বামী। এই এক মাস তাঁকে যাবতীয় প্রবচন দেওয়ার কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়বে না প্রত্যাহার করা হবে, শুদ্ধিকরণ শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

[আরও পড়ুন: ‘মিনি হানিমুন’-এ প্রেমই প্রেম, শ্রুতিকে বিশেষ উপহার স্বর্ণেন্দুর, লিখলেন প্রেমপত্র]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement