অরিঞ্জয় বোস: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) নির্ঘাৎ খেয়াল করেননি। খেলা-টেলা ততক্ষণে শেষ। কেকেআর হেসেখেলে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতে গিয়েছে। বরাবরের দাদা-মোহান্ধ বলে পরিচিত কেকেআরের ভেঙ্কটেশ আইয়ার হাতে চাঁদ পেয়ে গিয়েছেন মোটামুটি। শৈশব থেকে তাঁর ‘আরাধ্য’ যিনি, সেই দিল্লি ক্যাপিটালস ‘ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে পেয়ে তাঁর কাছে ক্রিকেট-শস্ত্রশিক্ষা নিতে নেমে পড়েছেন আইয়ার। প্রকৃত গুরুর মতো সৌরভও ‘ছাত্র’কে দেখাচ্ছিলেন ক্রিকেটের টেকনিক্যাল বিষয়পত্র। তাই প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক খেয়াল করেননি, ইডেন প্রদক্ষিণ শেষ করে অতি সন্তর্পণে তাঁর দিকে আরও একজন আসছেন। আসছেন, তাঁর পিছন দিক থেকে। শাহরুখ খান!
চব্বিশ ঘণ্টা আগে একই মাঠে, এই ইডেনেই প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ছিলেন শাহরুখ-সৌরভ। কিন্তু তারপরেও দু’জনের দেখা হয়নি। ছেলে আব্রামের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে শাহরুখ (Shah Rukh Khan) রবিবার হোটেলে ফিরে যান। সৌরভ সে সময় দিল্লি ক্যাপিটালস প্র্যাকটিসের তত্ত্বাবধান করছিলেন। যার পর কারও কারও মনে হচ্ছিল, দু’জনের পুরনো ‘শৈত্য’ কোনও কারণে পুনরায় ফিরে এল কি না? প্রাক্তন নাইট অধিনায়ক সৌরভের সঙ্গে টিম মালিক শাহরুখের সম্পর্ক এককালে কোথায় পৌঁছেছিল, তা কেকেআর ইতিহাসের তাম্রলিপি ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। কে জানত, সোমবার ‘বাদশা’ স্বয়ং সৌরভকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে সে সমস্ত জল্পনাকে গঙ্গাবক্ষে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন? শুধু কি তাই? শোনা গেল, শাহরুখ নাকি এ দিন সৌরভকে দেখিয়ে খুদে আব্রামকে বলেন, ‘‘এঁকে চেনো? ইনি ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। দেখে রাখো এঁকে।’’
[আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়নশিপের হ্যাটট্রিক পিএসজি-র! ফরাসি লিগে এমবাপেদের দাপট]
তর্কাতীত ভাবে যা সোমবার ইডেন-রাতের শ্রেষ্ঠ মন্তব্য। ঠিক যেমন শাহরুখ-সৌরভ আলিঙ্গন, এ দিন রাতের শ্রেষ্ঠ ছবি। এবং এই একবারই নয়। ‘কিং খান’ খেলা শেষে আরও একবার ইডেন-জনতার হৃদয় হরণ করে গেলেন। রিঙ্কু সিংকে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে রাখার সর্বাত্মক দাবি তুলে। ভাবলে আশ্চর্য লাগতে পারে। তবে রিঙ্কুর সঙ্গে তাঁর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের একটা বড়সড় মিল আছে। শাহরুখকে কেউ যেমন হাতে ধরে মহানায়ক বানিয়ে দেননি, তাঁর যেমন পূর্ব নির্ধারিত সাফল্যের কোনও সিঁড়ি ছিল না, ভরসার পাদানি ছিল না, রিঙ্কুরও তাই। তাঁরও কিছু ছিল না। রিঙ্কুর বাবা বাড়ি-বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার দিতে যেতেন। একটা সময় রিঙ্কুর (Rinku Singh) কাছে সাফাইকর্মীর কাজ করার প্রস্তাব গিয়েছে। কিন্তু অভাবের তাড়নাতেও নিজের স্বপ্নকে তাড়া করা ছাড়েননি রিঙ্কু। শাহরুখের মতো। শাহরুখও তো যা হয়েছেন, নিজের চেষ্টায়। নিজের অধ্যাবসায়ে। আর তাই কোথাও না কোথাও গিয়ে রিঙ্কু সিংদের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান শাহরুখ!
এ দিন গভীর রাতে সম্প্রচার সংস্থায় তো তিনি সেটা বলেও গেলেন। শাহরুখ বলছিলেন, ‘‘আমি শুধু আমার টিমের প্লেয়ারদের হাসিখুশি দেখতে চাই। ওরা আনন্দে আছে, দেখতে চাই। আমি আমার টিমের প্লেয়ারদের যখন খেলতে দেখি, মনে হয় ওদের সঙ্গে আমিও যেন এক ক্রীড়াবিদের জীবনযাপন করছি। বিশেষ করে রিঙ্কু, নীতীশদের (রানা) মতো প্লেয়ারদের মধ্যে তো আমি নিজেকে দেখতে পাই। তাই ওরা ভালো খেললে, আমার অসম্ভব ভালো লাগে।’’ ‘বাজিগর’-কে এরপর জিজ্ঞাসা করা হয়, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল নিয়ে। শাহরুখ বলে দেন, রিঙ্কুকে তিনি বিশ্বকাপের টিমে দেখতে চান। ‘‘আমাদের দেশে কত অসাধারণ প্লেয়ার আছে। আশা করছি, রিঙ্কু বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পাবে। ও যদি সুযোগ পায়, আমি খুব খুশি হব। আমার কাছে সেটা বিশাল বড় পাওনা হবে।’’ জাতীয় নির্বাচককুল, শুনছেন?